জিহাদ হোসেন রাহাত, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ
ওজনদার রাজনৈতিক নেতায় ভরপুর দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুর। পুরো দেশের ন্যায় এখানেও বইতে শুরু করেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ছাড়াও এ হাওয়ায় ভাসছে অন্য সব রাজনৈতিক দলও। দীর্ঘ সময় থেকে এ জেলার রায়পুর ও সদরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৭৫ নম্বর আসন (লক্ষ্মীপুর-০২) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও জাপা-আওয়ামী বন্যায় এখানে বেশ কয়েকবার বিপাকে পড়েছে দলটি। পর পর দুবার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে সেই ইতিহাস পাল্টে দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এসে যেন উল্টে গেল বিএনপির গণেশ।
বর্তমানে এ আসনটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কে ২৮ জানুয়ারি ২০২১ সালে কুয়েতের ফৌজদারি আদালত সাত বছরের কারাদণ্ড দিলে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ ও ৬৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদের সদস্য পদ হারান তিনি। পরে ২৮ জুন ২০২১ সালের শূন্য আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। এতে করে আসনটিতে আসন গেঁড়ে বসতে সক্ষম হয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের পাকাপোক্ত বর্তমান এমন অবস্থানের পরেও বিএনপির উল্টে যাওয়া গণেশ আগের রুপে ফিরে এ আসনে ঘটাতে পারে নৌকার ভরাডুবি এমন ভাবনাও ঘুরছে জনমনে।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জয়ী হয়ে আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হারুনুর রশিদ। এর প্রায় ২০ বছরেরও অধিক সময় পর আরেকটি উপনির্বাচনে (২৮ জনু -২০২১) আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। এতে করে বলা চলে ১৯৮৪ সালে এই সংসদীয় আসনটি সৃষ্টির পর থেকে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
লক্ষ্মীপুর-০২ আসনটিতে জয় পেতে শুধু যে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল করছে নানান পরিকল্পনা তা কিন্তু নয়।আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাসের তুরুক হয়ে খেলা ঘুরিয়ে দিতে প্রস্তুত জাতীয় পার্টিও। ১৯৮৪ সালে সংসদীয় আসনটি গঠনের পর ১৯৮৬ সালে এখানে প্রথম জয় পান জাতীয় পার্টির চৌধুরী খুরশিদ আলম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে লক্ষ্মীপুর-০২ আসনে রাজনীতির মাঠে অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। দল দুটির সক্রিয়তাকে আসন পুনরুদ্ধারের অভিযান বলে উল্লেখ করছেন এখানকার ভোটাররা।
এখন পর্যন্ত এই আসন থেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিক আলোচনায় আছেন, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, এমপি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু। অবশ্য লক্ষ্মীপুর-২ আসনটিতে এই তিনজন রাজনীতিবিদ এখন পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন বলে দলগুলো মারফত জানা গেলেও চুড়ান্ত প্রার্থী কে হবেন সেটি নির্ভর করছে দলগুলোর নীতিনির্ধারণী ও নির্বাচন পরিচালনা সংশ্লিষ্ট কমিটির উপর।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি বলেন,শুধুমাত্র লক্ষ্মীপুর-২ নয়, পুরো জেলাতেই আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। ব্যাপক উন্নয়ন ও ভোট বাড়ায় এখানে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় পাবে।
একই প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল খায়ের ভুঁইয়া বলেন, আমরা এই মুহুর্তে আগামী নির্বাচনের কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা বা মন্তব্য করতে চাই না। এখন একটাই কাজ- এই সরকারের বিদায়।
প্রার্থী নির্বাচন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রায়পুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাহার বলেন, আমাদের একক প্রার্থী হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু। জোটগতভাবে আমরা এ আসনটির দাবি জানাবো।
আওয়ামী লীগে-বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি ছাড়াও এ আসনে লড়তে প্রস্তুত বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীও। লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে দলটি তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতে আমির মাষ্টার এস ইউ এম রুহুল আমিন ভুঁইয়ার নাম ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে। এ আসনের মহিলা ভোটাদের মধ্যে দলটির বিশাল ভোট ব্যাংক থাকার পাশাপাশি বিপুল জনমত রয়েছে বলে জানা যায়।
নির্বাচন নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের আমীর এস ইউ এম রুহুল আমিন ভুঁইয়া বলেন, তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না। এরপরও খালি মাঠে কাউকে এককভাবে গোল দিতেও দেওয়া হবে না। আমরা সব রকমের প্রস্তুতিই নিচ্ছি। আমাদের দল সাংগঠনিকভাবে এখন আগের চেয়েও সুসংগঠিত।