মির্জা সাইদুল ইসলাম সাঈদ
স্টাফ রিপোর্টার দৈনিক বিজয়ের বাণী:
অনেকটা পাগলাটে ২৪-২৫ বছরের ছেলেটা, বাবা মৃত, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মায়ের সেবা যত্ন নিতে বিয়েও করতে হয়েছে, বউও অনেকটা পাগলী প্রকৃতির। মা ও স্ত্রীর মুখে দু-বেলা দু-মুঠো অন্ন তুলে দিতে শাহ আলমের ছিলো প্রাণপণ চেষ্টা। কারো দোকানে পানি আনা, কারো দোকান ঝাড়ু দেয়া এসব নিয়ে সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকতো,দিন শেষে কেউ দশ কেউ বিশ টাকা দিতো তা দিয়েই চলতো তাদের তিনজনের সংসার।
টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার প্রান্তিক এলাকা আড়াই পাড়া গ্রামের দিন দরিদ্র শাহ আলম ওরফে বাদশা খান সখিপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তার ফোয়ারা চত্বরে দীর্ঘদিন যাবত বিনা বেতনে ট্রাফিকের মতই কাজ করে যাচ্ছিল। কখনো নাইটগার্ডের পুরনো পোশাক আবার কখনো চৌকিদারের পুরনো পোশাক পড়েই চলতো তার দিন বাপি কর্মব্যস্ততা।মুখে ট্রাফিকের মতো বাঁশি আর হাতে ছোট্ট একটি লাঠি নিয়ে যানজট নিরসনে সারাদিন তার ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।
শাহ আলমের বাড়ি সখিপুর সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে আড়াইপাড়া গ্রামে হওয়ায় প্রতিনিয়ত তাকে সকাল-সন্ধ্যা যাতায়াত করতে হতো। প্রতিদিনের মতো ৩ নভেম্বর সন্ধ্যার পর অটো গাড়িতে বাড়ি ফেরার সময় কচুয়া পেট্রোল পাম্প পার হয়ে ছোট ব্রিজের কাছে অটো গাড়ি উল্টে তার পা ভেঙে যায়। সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূনর্বাসন প্রতিষ্ঠান,ঢাকা (পঙ্গু হাসপাতালে)পাঠানো হয়। সহায় সম্বলহীন দরিদ্র ছেলেটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার মতো ক্ষমতা তার বা তার পরিবারের নেই।
মানবতা বেঁচে থাকুক অনন্তকাল "মানুষ মানুষের জন্য" বিখ্যাত এই উক্তিকে সামনে রেখেই হতদরিদ্র ছেলেটির চিকিৎসায় মানবতার হাত বাড়ালেন সখিপুর উপজেলা সিএনজি অটোরিক্সা ও অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনের সভাপতি হাফিজুর রহমান হান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল সিকদার অসহায় শাহ আলমের চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন। জানা যায়, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা সাধ্যমত অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি নিয়মিত রাখছেন খোঁজ-খবরও।
সখিপুর উপজেলা সিএনজি অটোরিক্সা ও অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল সিকদার বলেন,আমাদের সকলের একটু একটু সহযোগিতায় হয়তো সে আবারও আমাদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারবে। আমি ও আমার সংগঠনের সভাপতি হাফিজুর রহমান হান্নান সংগঠনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য কিছু অর্থ প্রদান করেছি এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকবো। তৎসঙ্গে সখিপুরের বিত্তশালী সহৃদয়বান সকলকে এই মানসিক প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র শাহ আলমের চিকিৎসার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে বিনীত আহ্বান জানান।
এছাড়া মানবিক মানুষ হিসেবে খ্যাত, ইতিমধ্যেই সখিপুরের সর্ব মহলের ভালোবাসায় শিক্ত এক মহৎ মানব "তুহিন সিদ্দিকী" সখিপুর তথা আশপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার নেয়া দুস্থ অসহায় রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে পারাটাই যার আত্মিক প্রশান্তি। হতদরিদ্র শাহ আলমের ক্ষেত্রেও তার অকৃত্রিম সহযোগিতার ব্যত্যয় ঘটেনি। মোঃ নুরুল সিকদার তুহিন সিদ্দিকীর এই মহানুভবতার প্রতিও কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।