মির্জা সাইদুল ইসলাম (সাঈদ)
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক বিজয়ের বাণী।
১২সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি ঘোষণার পরই শুরু হয়েছে বিদ্যালয় গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। দীর্ঘ দেড় বছর পর সারাদেশের বিদ্যালয়গুলো খোলা হবে সে আশায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে যেন প্রাণ ফিরেছে। তারই ধারাবাহিকতায় চলছে ধোয়া মোছা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। অনেক সংখ্যক বিদ্যালয় দপ্তরী না থাকায় শিক্ষকরাই হাতে তুলে নিয়েছেন এই পরিছন্নতার কাজ।
টাঙ্গাইলে জেলার সখিপুর উপজেলায় সর্বমোট ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তন্মধ্যে ৭৯টি বিদ্যালয়েই নেই দপ্তরি। খোঁজ নিতে সরেজমিনে যেতেই চোখে পড়ে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই নেমে পড়েছেন বিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্ষেত্রে। হাতে রয়েছে মাত্র কয়েকটা দিন তার পরই ১২সেপ্টেম্বর খোলা হচ্ছে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বহস্তে ধোয়ামোছা সহ সকল পরিচর্যা ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে শরীর থেকে ঘাম ঝরলে ও তাদের বিদ্যালয় খোলার আনন্দকে একটু অক্লান্ত করতে পারেনি।
সখিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সূত্র মতে, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ঠেকাতে ও শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারি ঘোষণার পর থেকে সখিপুর উপজেলার ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭টি মাদ্রাসা,কারিগরি শিক্ষা সহ ১০টি কলেজ (উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত) খোলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের বেলতলী, ধলীপাড়া,চাম্বলতলা এবং দেবলচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শিক্ষকরাই শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা ঝাড়ু দেয়া থেকে শুরু করে ধোয়ামোছা ও অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন।
বেলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেখানে খোঁজখবর নিতে গেলে দেখা যায়, সেখানে চারজন শিক্ষক মিলে- শ্রেণিকক্ষের ধুলোবালিতে ঢাকা পড়া স্কুল বেঞ্চ আলমারি চেয়ার টেবিল সহ অন্যান্য আসবাবপত্র গুলো ঝাড়ু দিচ্ছেন। শিক্ষক কামরুননাহার বলেন, দেড় বছর যাবত বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের নলকূপটি বিকল হয়ে আছে। দুদিনের ভেতর মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া
উপজেলার চাম্বলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সহকারী শিক্ষক শেফালী আক্তার বলেন, আমরা নিজেরাই বালতি ভরে পানি এনে বেঞ্চ সহ বিদ্যালয় এর যাবতীয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয়ের আঙিনা ঝাড়ু দিয়েছি। তবে ঝোপঝাড় পরিষ্কারের জন্য দু-জন শ্রমিক নেওয়া হয়েছিলো।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিরিনা আক্তার বলেন, তাঁদের বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লকের (শৌচাগারের) কাজ চলছে। করোনার কারণে এক বছর ধরে ঠিকাদার কোনো কাজ করছে না। ফলে বিদ্যালয়টি খুললেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রকৃতিগত কাজে একমাত্র অবলম্বন হবে বিদ্যালয়ের পাশের গৃহস্থ বাড়িটি। করোনা কালীন সময়ে এটাই হবে আমাদের জন্য বড় একটা সমস্যা।
সখিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল জানান,৭৯টি বিদ্যালয়ে দ্রুত দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ইতিপূর্বেও অনেকবার জানিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, তাপমাত্রার মেশিন ও একটি আলাদা আইসোলেশন কক্ষ ঠিক করে রেখেছেন। যাতে করে স্কুল খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, ৮সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো প্রস্তুত করে ফেলতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান কে সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনবলের অভাব রয়েছে, তাদের দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে আপাতত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে স্কুল খোলার কার্যক্রম যথেষ্ট এগিয়েছে।