দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ
গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্লাস বন্ধ থাকায় অভিভাবকেরা বেতন দেন না। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বেতন না পাওয়ায় আমাদের মাসিক সম্মানীও দিতে পারছে না। কবে বিদ্যালয় খুলবে সেটাও অনিশ্চিত। মাস থেকে বছর যায়, আমাদের খোঁজ কেউ রাখেন না।’ কথাগুলো বলছিলেন শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ।
১৫ মাস ধরে বেতন–ভাতাহীন অবস্থায় দুর্বিষহ দিন কাটানো দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউপির একটি আইডিয়াল একাডেমির শিক্ষক তিনি।
উপজেলার বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনের একাধিক শিক্ষক- শিক্ষিকা জানান, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সরকারি–বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। উপজেলার সব কয়টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শিক্ষকেরা। দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রায় ৪০ টি কিন্ডারগার্টেনের ২০০ শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। প্রায় ১৬ মাস ধরে বেতনও বন্ধ রয়েছে তাঁদের। অর্থাভাবে অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। কেউ আবার বেঁচে নিয়েছে নতুন পেশাও।
এদিকে অনেক কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের ভাড়া, বিদুৎতের বিলসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় ধারদেনা করে চালিয়ে নিতেও হিমশিম খাচ্ছে। ভর্তুকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না, সেই শঙ্কায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এসব কিন্ডারগার্টেন যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে উপজেলার এসব স্কুলে পাঠদানকারী প্রায়(৭০০০-হাজার) সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়বে।
দোয়ারাবাজারের কিন্ডারগার্টেন–সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকারি সহায়তা না পেলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। ঋণে জর্জরিত অবস্থায় অনেক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হওয়ার পথে। শিক্ষকেরা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হবেন। এতে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে পড়বে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউপির স্কলার্স একাডেমির প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক ছামির আলী বলেন , ‘২০১৮ সালে সাত'জনের উদ্যোগে স্কলার্স একাডেমি প্রতিষ্ঠা করি। বছর না পেরুতেই পাহাড়ি ঢলে নদীভাজ্ঞনে স্কুলের সদ্য নতুন টিন সেট ভবনটি বিলিয় হয়ে যায়। নদীতে স্কুল বিলিন হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকট পোহানোর কারনে মালিকপক্ষ অনেকের মনে দ্বীমত দেখা দিলে ও পরবর্তীতে স্থানীয় একজনের বাড়িতে অস্থায়ী ভাবে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করি। দীর্ঘ ১৫ মাস যাবত স্কুল বন্ধ থাকার কারনে বর্তমানে যে অবস্থায় এসে দাড়িয়েছি মনে হয় না প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে পারব।
উপজেলার নরসিংপুর ইউপি'র আল-মদিনা একাডেমির পরিচালক রফিকুর রহমান বলেন , ২০২০ সালের মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার পর আমাদের বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বন্ধ রেখেছেন বেতন।
শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে শিক্ষকদের সম্মানী সহ স্কু্লের পরিচালনার যাবতীয় খরচ যোগান দিতে হতো আমাদের।
১৫ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের ভাড়া, শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছি না। এখন তাঁদের টিউশনি না থাকায় একমাত্র আয়ের পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকেরাও মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
তিনি আরও বলেন‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটির মাসিক ব্যয়(৮০ হাজার) টাকার ওপর। বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকায় বেতন পাচ্ছি না। এই বিদ্যালয়ে ১৫ জন শিক্ষক ও একজন আয়া রয়েছেন। প্রতিষ্ঠান ভবনের একবছরের ভাড়া ও বকেয়া রয়েছে। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ঋণের বোঝা নিয়ে দেউলিয়া হওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই।
বাংলাবাজার ইউপির আইডিয়াল একাডেমির পরিচালক এমদাদুল হক মিলন বলেন, ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মাসিক ব্যায় প্রায় (১ লক্ষ) টাকা। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে বিপাকে আছি। না -পারি শিক্ষকদের বেতন দিতে না -পরি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বাড়া পরিশোধ করতে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে প্রতিষ্ঠান নিয়ে দাঁড়াতে পারব বলে মনে হচ্ছেনা।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন দোয়ারাবাজার উপজেলার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৬ মাস ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না। পাশাপাশি অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করায় অর্থকষ্টে দিশেহারা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকেরা। কিন্ডারগার্টেন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহি অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মহীন মানুষকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। নন এমপিও শিক্ষকদেরও প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন–সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তালিকা পেলে আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সরকারি বিভিন্ন প্রনোদনা- সহযোগিতার আওতায় নিয়ে আসব।