মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
মোংলা বন্দরে আমদানি হওয়া অ্যাম্বুলেন্স (জরুরী স্বাস্থ্য সেবা) কাস্টমস হাউজের শুল্ক জটিলতায় ছাড় হচ্ছে না। এ কারণে মোংলা বন্দরে পড়ে আছে ২০টি অ্যাম্বুলেন্স। সেগুলো বের করতে পারছেনা বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার এসোসিয়েশন (বারবিডা)। মোংলা কাস্টমস হাউজ বিভিন্ন জটিলতা দেখিয়ে এসব গাড়ীগুলোয় শুল্কায়ন করছেন না। এজন্য আমদানী করা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর ১৭গুন শুল্ক জরিমানা দিয়ে খালাস করানোর জন্য চাপ দিচ্ছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বারবিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৫টি শর্ত পূরণ করে মোংলা বন্দরে অ্যাম্বুলেন্স আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া বিআরটিএ'তে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রেজিষ্ট্রেশনের পর সর্বোচ্চ ১২০দিনের মধ্যে শর্তানুযায়ী রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত দলিলাদি সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউজে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জটিলতার অযুহাত দেখিয়ে আমদানি হওয়া অ্যাম্বুলেন্স গাড়ী ছাড় করছেন না।
এদিকে উদ্ধুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার এসোসিয়েশন (বারবিডা) মোংলা কাস্টমস হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে মঙ্গলবার (৭মে) দুই দফায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বারবিডার সভাপতি মোঃ হাবিব উল্লাহ ডন জানান, দেশের দক্ষিণ জনপদের মোংলা একমাত্র সমুদ্র বন্দর হলেও আমদানি রপ্তানি শূন্যতার কারণে এ বন্দরের ন্যায়ে মোংলা কাস্টমস হাউজের রাজস্ব আদায়ে বা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পূর্ণতা ২০০৮সালের পূর্বে কখনই অর্জিত হয়নি। একটি সচল কর্মমুখর অগ্রসর বাংলাদেশের অধিনায়ক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে জানা অজনা সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে ২০০৮সালে প্রায় পরিত্যাক্ত মোংলা বন্দরে ব্যবসায়ীরা রিকন্ডিশন্ড গাড়ী আমদানী শুরু করে। বন্দরে বর্তমান সক্রিয়তায় কাস্টমস হাউজের রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতিতে নানামুখী ইতিবাচক অবদানে সিক্ত গাড়ী আমদানীকারকেরা।
বৈঠক উপস্থিত গাড়ী আমদানীকারকরা বলেন, অ্যাম্বুলেন্স আমদানি বিপনন ও রেজিষ্ট্রেশন পর্যায়ে প্রদত্ত শর্ত সমূহের কারণে কোনরুপ অনিয়মের সুযোগ নেই। শুল্ক কর্তৃপক্ষের কোন অভিযোগ থাকলে সেটি আলোচনা সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা সম্ভব। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের জন্য বিপুল বিনিয়োগের আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড অ্যাম্বুলেন্স শুল্কায়ন বন্ধ রাখা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
আমদানিকৃত গাড়ির শুল্কায়ন ও খালাসে মোংলা কাস্টমস হাউজের অতীত ঐতিহ্য এবং বর্তমান ব্যবসা বান্ধব কর্মতৎপরতার আলোকে ন্যায্যতার বিবেচনা করে উত্থাপিত বিষয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বৈঠকে আহবান জানান গাড়ি আমদানীকারক ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার এসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি মোঃ হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, অগ্রিম টাকা পরিশোধ করার পরও সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। নানা সমস্যার ফাঁদে মোংলা কাস্টমসে আটকা পড়ে রয়েছে ২০টি অ্যাম্বুলেন্স। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব অ্যাম্বুলেন্সকে মাইক্রোবাস হিসেবে খালাস করে নেয়ার জন্য তাদেরকে চাপ দিয়ে আসছে। ফলে আমদানিকারকদের গুণতে হবে নির্ধারিতের তুলনায় অনেক বেশি শুল্ক।
তবে বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফের ২০২৩ইং-২৪ইং সংস্করণেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আমদানি করা যাবে নতুন অ্যাম্বুলেন্স ও অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রূপান্তরিত রিকন্ডিশন গাড়ি। অর্থাৎ কোনো বাঁধা নেই প্রচলিত বিধি-বিধানে। শুধু তাই নয় অ্যাম্বুলেন্স আমদানিতে বিশেষ সুবিধাও দিয়ে আসছে সরকার। তিনি বলেন, মাইক্রোবাস হিসেবে কাস্টমস হাউজে আমদানিতে ৮৯দশমিক ৩২শতাংশ এবং নোহা ও স্কয়ার মডেলের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় ১৫১শতাংশ। যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সাইরেন-লাইট সুবিধা থাকাসহ পাঁচটি শর্ত পূরণ করে এসব গাড়িকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি করলে শুল্ক দিতে হয় মাত্র ৩৭শতাংশ।
এদিকে সরকার যেখানে দিচ্ছে বিশেষ সুবিধা, সেখানে হঠাৎ এই অ্যাম্বুলেন্স আমদানির পরও কেন ছাড় করতে দিচ্ছে না মোংলা কাস্টমস? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বারভিডার নেতারা।
এ বিষয়ে মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্স আমদানির ঘোষনায় এমন কিছু গাড়ি আনা হয়েছে যেগুলো পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। এরমধ্যে নোহা এবং ভক্সি মডেলের গাড়ি রয়েছে। সে বিষয়ে কাস্টমস এবং সরকারের দুইটি সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্তে প্রমানিত না হলে আমদানি হওয়া অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি ছাড় দেওয়া হবে।
এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ মোংলা বন্দরে ১০২৩টি গাড়ি শুল্কায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। সেগুলো গত দু'মাস ধরে শুল্ক কর দিচ্ছেন না আমদানীকারকরা। এসব গাড়ি এখন নিলামযোগ্য হয়ে গেছে। তবে আইন মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা এবং শুল্ক কর দিলে কায়িক পরীক্ষা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব গাড়ি শুল্কায়ন করা হবে।