মির্জা সাইদুল ইসলাম (সাঈদ)
স্টাফ রিপোর্টার
টাংগালের সখিপুর উপজেলার কুতুবপুর হাট এই এলাকার একটি বিখ্যাত হাট হিসেবে পরিচিত একটি নাম। বিশেষ করে বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল, যা লালমাটিতে বেড়ে উঠা গাছের হওয়ায় খুব সুস্বাদু বলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর চাহিদা অনেক বেশি। এর পাশাপাশি অতি সুস্বাদু ও পুষ্টি গুনে ভরপর ফলের তালিকায় রয়েছে কলা। দেশের সিংহভাগ কলা উৎপাদন হয় এই এলাকায়। বিশেষ করে টাঙ্গাইল জেলার পাহাড়ি এলাকা গুলোর মধ্যে সখিপুর উপজেলা এসব মৌসুমি ফল উৎপাদনে অন্যতম।
এই এলাকার কাঁঠাল, আম, কলা, পেঁপে এবং লেবু, প্রতি বছর নিজ জেলার চাহিদা পূরণ করে, রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণেও বরাবরই অনন্য ভুমিকা রেখে আসছে । বিভিন্ন রকম মৌসুমী এ ফল, কাঁচা সবজি বিক্রয়ের জন্য টাঙ্গাইলে যদিও বেশ কয়েকটি হাট রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হাট'টি হলো সখিপুর উপজেলাধীন কুতুবপুরে। এ হাট'টি কাঁঠাল এবং কলা আমদানির জন্য বিখ্যাত একটি হাট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনা কালীন লকডাউনের কারনে দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় কলা চাষীদের অনেকটা নাজেহাল অবস্থা। কলা চাষীদের এতো আশার এই ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
বিশেষ করে এই হাট টিতে জৈষ্ঠ,আষার মাসে কাঁঠালের প্রচুর আমদানি হয়ে থাকে। আর এ সময় অন্যান্ন জেলায়ও থাকে কাঁঠালের প্রচুর চাহিদা , বর্ষা ঘেঁষা গ্রীষ্মের এই মৌসুমে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকারী ক্রেতারা, হাটের দিন ছাড়াও মাসব্যাপী এই হাটটিতে বিচরণ করে। এ সময় পাইকার, উৎপাদক, মালবাহী ছোটো বড়ো ট্রাক,পিক-আপের চালক এবং মুটে মজদুরদের পদচারণায় হাট টির চিত্র থাকে অনেকটা উৎসব মুখর। এ ছাড়াও গ্রীষ্ম কালে কৃষকের উৎপাদিত আরও বিভিন্ন রকম ফসল ও শাক,সবজিতে ভরপুর থাকে হাট টিতে। এ মৌসুমে কাঁঠাল এবং কলা, ক্রয় বিক্রয় ও ট্রাক লোড করা সহ নানান কাজে ব্যাস্ত সময় কাটে তদসংশ্লিষ্ট সকল শ্রেনী পেশার মানুষের। এই বছর করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে লকডাউন থাকায় ঢাকা সহ অন্যান্ন জেলা থেকে বড় পাইকাররা না আসাতে বাজার মূল্য নেমে আসে অর্ধেকে। কৃষকের উৎপাদিত এসব ফল, ফসলে বড়ো ধরণের লোকসানের মুখে রয়েছে এ অঞ্চলের মৌসুমি ফসল উৎপাদন কারীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সহ এই এলাকার সাধারণ মানুষের ভাষ্য মতে, এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ কলা,কাঁঠাল, পেঁপে, লেবু সহ অন্যান্ন ফল এবং সবজির প্রচুর চাষাবাদ হয়। কেউ বেকার বসে থাকে না। সামান্য জমি থাকলেও সে সেখানে কোনো না কোনো ফল বা শাঁক-সবজির আবাদ করে। এ ছাড়াও এই এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে অনেকগুলো পোল্ট্রি ফার্ম ও গবাদিপশুর খামার কিন্তু লাল মাটির এই পাহাড়ি এলাকার সিংহভাগ রাস্তাই কাঁচা, সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা গুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। যার ফলে মালামাল পরিবহন করা ভীষণ কষ্টকর। আর এ কারণে প্রতি বছর অনেক ফসল খেতেই নষ্ট হয়ে যায়, এতে করে বরাবরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে এই এলাকার সাধারণ কৃষক ও খামারীরা। তিনি জোর দিয়ে বলেন রাস্তা গুলো পাকা করণ হলে অন্তত কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে এই লাল মাটির কৃষকেরা।
জানতে চাইলে এই কুতুবপুর বাজার বনিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক, মো. মোতালেব মিয়া বলেন, এই বাজারটি কাঁঠাল এবং কলার জন্য ঢাকা সহ সারাদেশে বিশাল পরিচিত। এখানে প্রায় সারাবছর দেশের বিভিন্ন দূরপ্রান্তের ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার লেনদেন করতে হয় কিন্তু এখানে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক না থাকায় তাদের অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কেনাকাটা করতে আসতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে যদিও কয়েকটি বিকাশ, নগদ ও ডাচ্ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে কিন্তু হাটের দিন হলে ব্যবসায়ীদের চাহিদা পূরণে তাদের বরাবরই হিমশিম খেতে হয়। আমি এই কুতুবপুর বাজারে অন্তত একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল দূরদূরান্তের ব্যাবসায়ী সহ এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয়, বাসাইল সখিপুর আসন থেকে নির্বাচিত ময়নীয় সাংসদ, টাংগাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জননেতা মো.জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি) জোয়াহের মহোদয়ের সঙ্গে, তিনি বলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে, যত দ্রুত সম্ভব ওই এলাকার সর্বসাধারণের সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।