মির্জা সাইদুল ইসলাম (সাঈদ)
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক বিজয়ের বানী।
টাংগাইলের সখিপুরে প্রাইমারী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি উপবৃত্তির টাকা ডাক বিভাগ নিয়ন্ত্রিত মোবাইল ব্যাংকিং নগদ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সহজে পৌঁছে দেয়া হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একাধিক শিক্ষার্থী ও অবিভাবক জানান তাদের ব্যাক্তিগত নগদ একাউন্ট থেকে কে বা কারা তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে এবং অবিভাবকের মোবাইলে ফোন করে বলা হয়েছে আপনার মোবাইলের নগদ একাউন্টে টাকা পাঠানো হবে জরুরী পিন নাম্বার টি বলুন! শিশু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অবিভাবকই হয়ে থাকে শিক্ষার্থীর মা। আর সরল প্রাণ মায়েদেরকে বোঁকা বানিয়ে খুব সহজেই হ্যাকাররা লুটে নিচ্ছে সরকারের দেয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেই টাকাও।
উপজেলা সরকারি মডেল প্রাইমারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী (রোল নং ৮৪) এর অবিভাবকের ফোন নাম্বারে গত(২৭জুন) ২০২১সন্ধ্যা০৬ টায়, পার্সোনাল নগদ একাউন্টে ৯০০টাকা ডিসবার্সমেন্ট- Received (govt) করা হয়। ওই শিক্ষার্থীর মা জানান, মেয়ের জীবনের প্রথম পাওয়া উপবৃত্তির টাকাটা তখন না তুলে, আমার পার্সোনাল নগদ একাউন্টেই রেখে দেই, যেহেতু স্কুল বন্ধ, পরে টাকা উত্তোলন করে মেয়েকে স্কুলড্রেস সহ অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় করে দিবো। কিন্তু গত (৯ আগষ্ট) ব্যালেন্স চেক করে দেখি একাউন্টে ওই টাকাগুলো নেই। পরে নগদ এ্যপ্সের বদৌলতে জানতে পারি গত (২৮ জুলাই) টাকাটা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে! তিনি দুঃখ করে বলেন অল্প টাকা হলেও এই টাকা শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে যথেষ্ট সহায়ক ভুমিকা রাখে, তাছাড়া কিছু কিছু অসচ্ছল, নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের পড়াশোনার জন্য এই উপবৃত্তির টাকাটাই স্কুলড্রেস, ব্যাগ সহ অন্যান্য শিক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের একমাত্র অবলম্বন। অথচ ক্ষুদ্র টাকা যখন অন্য কেউ হ্যাক করে নিয়ে যাচ্ছে তখন একদিকে ওই সকল পরিবার গুলো যেমন হতাশায় পরছে অন্যদিকে কোমলমতি শিশুদের পড়াশোনার উপরও পরছে এর বিরূপ প্রভাব।
অপর এক তথ্যে সখিপুর সরকারি মডেল প্রাইমারি স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকা জানান, তার জানামতে এ বছর আরও এক তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী যার (রোল নং ৬৫) এর উপবৃত্তির টাকা হ্যাক করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর মা। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি একাধিকবা ওই শিক্ষার্থীর অবিভাবকের মোবাইলে ফোন করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি এবং শিক্ষিকা নিজেও কথা বলার চেষ্টা করে তাকে পাননি বলে জানান। তিনিও ঘটনা গুলো দুঃখ জনক বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জোরালো ভাবে এর প্রতিকার দাবী করেন।
জানতে চাইলে, সখিপুর সরকারি মডেল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে, আমরা এ ব্যপারে আমাদের উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে অবহিতও করেছি। কিন্তু তেমন কোনো প্রতিকার পাইনি।
প্রতিবেদকের প্রশ্নঃ-আপনারা এ বিষয়ে থানা পুলিশের কাছে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ করেন নি?
উঃ- না, আসলে আমরা এই সকল সমস্যা গুলো আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি, কিন্তু এ যাবৎ তেমন ফলপ্রসূ কিছু পাইনি।
প্রশ্নঃ- যদি এই বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে চাই তাহলে তো আপনার সহযোগিতা লাগবে। তিনি এই কথার জবাবে বলেন, আমি আমার জানা মতে যতটুকু সম্ভব অবশ্যই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবো।
তিনি আরও বলেন এই ধরনের অপরাধ যারাই করুক তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা উচিৎ। তা না হলে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলবে।
উল্লেখ্য বিষয় নিয়ে কথা হয়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে, তিনি বলেন এই বিষয়টি নিয়ে বিগত সময়ে একাধিকবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কে অবহিত করেছি। তিনিও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু এই পর্যন্ত কোনো প্রকার কার্যকরী পদক্ষেপ আমার চোখে পরেনি। যার ফলে এমন ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জানতে চাইলে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম সখিপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামকে মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে পাঠানোর পূর্বে আমাদের অবগত করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা করেনি। বিষয়টি আমিও শুনেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার ভিত্তিতে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করবো, সেক্ষেত্রে এই সকল টাকা উদ্ধার করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে থাকে।