আবীর হাসান স্বাধীন কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার মিরপুরে পরকীয়ার অভিযোগে সাইফুল ইসলাম (২৭) নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে শালিশি বৈঠকের মাধ্যমে স্থানীয় মাতব্বরা। সোমবার (১২ জুলাই) এ মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিরপুর থানা পুলিশ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানা হেফাজতে নিয়েছে।
আটককৃতরা হলেন-মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য নওয়াব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক আলী। ঘটনার পর থেকে সাইফুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মালিহাদ ইউনিয়নের আশাননগর এলাকার সেন্টু আলীর ছেলে ইটভাটার শ্রমিক সাইফুল ইসলাম প্রতিবেশি আনসার সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী এক সন্তানের জননী (২৫) এর সাথে অবৈধ কর্মে লিপ্ত হয়। এসময় প্রতিবেশিরা তাদের দুজনকে আটক করে। পরদিন রোববার সকাল ১১টায় আশাননগর মোড়ে তাদের গ্রাম্য শালিশ হয়। এসময় স্থানীয়দের সামনে এই ঘটনা যাতে পূর্নাবৃত্তি না হয় এজন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বিচারের রায় ঘোষণা করেন। এসময় সাইফুল ইসলামকে জুতোর মালা গলায় দিয়ে অর্ধেক গ্রাম ঘোরায়, সেই সাথে ৩০টি লাঠির আঘাত এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা হয়। এদিকে পরকীয়ার কারণে আব্দুল কুদ্দুস তার স্ত্রীর সাথে সংসার করতে আপত্তি জানালে কুদ্দুসের স্ত্রীকে শালিশি বৈঠকে তালাক দেওয়ানো হয়।পরে স্থানীয়রা সাইফুল ইসলামের সাথে ঐ নারীর বিয়ে দিতে চাইলে ঐ নারী আপত্তি জানালে তাকে মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়,আব্দুল কুদ্দুস ঢাকায় আনসার সদস্য হিসাবে চাকুরী করে।যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সংসার মনোমানিল্য চলছিলো। ইতিপূর্বে সাইফুল ইসলাম ভালোবেসে এক নারীকে বিয়ে করে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তানসহ স্ত্রী রেখে চাচাতো ভাই এর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া করে বিয়ে করে।
আমিরুল ইসলাম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, “পুরো গ্রামের লোকজনের সামনে জুতোর মালা গলায় দিয়ে নেতারা ঘুরিয়েছে। সেই সাথে সাইফুল ইসলামকে লাঠি দিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়েছে। দেশে তো আইন রয়েছে এমন্য গ্রাম্য ভাবে শালিশ করে শারিরিক নির্যাতন এ যুগে বিরল।”এদিকে এ ধরণের কর্মকান্ডের যাতে পূর্ণাবৃত্তি না হয় এজন্য এ ধরনের বিচার করা উচিৎ বলে দাবী করেন এলাকাবাসীরা। সমাজের এমন বিচার থাকলে অপরাধ অনেক কমে যাবে বলে তারা মনে করেন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) শুভ্র প্রকাশ দাস জানান,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচারের নামে লাঠি দিয়ে মারধরের ভিডিও দেখে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে জুতোর মালাসহ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।