সিলেট নগর ভবনে হামলার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিসিক।
সিলেট ব্যুরোঃ
সিলেট নগর ভবনে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের ‘অতর্কিত’ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তুতি শেষে রাতের মধ্যেই মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
মামলায় কতজনকে আসামি করা হচ্ছে; এই মুহূর্তে বিষয়টি না জানালেও নির্দিষ্টসংখ্যক আসামি করা হবে। এতে হামলাকারীদের পাশাপাশি উস্কানিদাতাদেরও আসামি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেয়র আরিফ বলেন- হামলাটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। আম্বরখানা থেকে লাল পতাকা সহকারে নিয়ে এসে তারা এই হামলা করে। নিশ্চয় সেখানে একটি পক্ষের ইন্দন রয়েছে। এই ইন্দনদাতাদেরও আসামি করা হবে।
বুধবার (২ জুন) বেলা ২টার দিকে সিলেট কর্পোরেশন কর্তৃক অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে নামা অভিযানের প্রতিবাদে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় রিকশা শ্রমিক ও সিসিক কর্মচারীদের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রথমে নগরীর আম্বরখানা থেকে রিকশাশ্রমিকদের একটি বিশাল মিছিল নগর ভবন গেইটের সামনে অবস্থান নেয় এবং তারা জোরপূর্বক নগর ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় সিলেট মহানগর পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাদের বাঁধা দেন। ঘটনার খবরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিসিক কর্মকর্তাদের নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলতে যান।
এসময় তারা অতর্কিত হামলা করে। নগর ভবনের গেইট লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে।
এতে নগর ভবনে সেবা নিতে আসা এক নাগরিকসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। এই অতর্কিত হামলায় সিসিক সংরক্ষিত কাউন্সিলর রেবেকা আক্তার লাকি’র স্বামী আব্দুল কাদের মালেকের মাথায় আঘাত লাগে।
তাকে তাৎক্ষনিকভাবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হামলায় সিসিকের গেইটের ভেতরে রাখা অন্তত ৫টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নগর ভবনে বিকেল ৪ টায় সিসিক কাউন্সিলরদের নিয়ে জরুরী সভা করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় নগর ভবনে অতর্কিত হামলা এবং জানমালের ক্ষতির তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এবং এই হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিলেট মহানগরে ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশা এবং টমটম চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হলেও গোপনে মহানগরে এসব বাহন চলাচল করে। যা বন্ধে সিলেট সিটি করপোরেশন বারবার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশও করেছে। সভায় সিসিকের প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশা ও টমটম সম্পূর্ণভাবে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানানো হয়।
এছাড়া নগরের বৈধ রিকশা যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করতে সময় বেঁধে দেয়া হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী, কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস লিপন, কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম এডভোকেট, কাউন্সিলর মো. ইলিয়াসুর রহমান, কাউন্সিলর মো. ছয়ফুল আমীন বাকের, কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তৌহিদ, কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ, কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক, কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী, কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রেবেকা সুলতানা ও রেবেকা আক্তার লাকী।
প্রসঙ্গত, নগরে ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশা ও টমটম চলাচল বন্ধে অভিযান চলছে। সকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে কোর্ট পয়েন্টসহ নগরের কয়েকটি এলাকায় অবৈধ ব্যাটারিচালিক রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সিসিক। অভিযানে বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হয়।
এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা শহরে চলাচল নিষেধ।
কিন্তু এসব রিকশার চালকরা হঠাৎ করে মিছিল নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ভিতর প্রবেশ করতে চাইলে সিসিকের নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁধা দেন।
তখন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি হয়। এসময় পুলিশ উভয় পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত (রাত পৌনে ১০টা) মামলা দায়ের করেনি নগর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউ। মামলা হলে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি এসএম আবু ফরহাদ।