সুনামগঞ্জের ছাতকে চুনশিল্প হুমকির মুখে।
সিলেট ব্যুরো:
সুনামগঞ্জের ছাতকে ভারত চুনাপাথর রপ্তানি প্রায় বন্ধ করে দেয়ায় ছাতকের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী চুনশিল্প পড়েছে হুমকির মুখে। দেশের প্রাচীন চুন ব্যবসা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এখনো টিকে থাকলেও গ্যাস বিলের কারণে দাঁড়িয়ে উঠতে পারছে না কারখানাগুলো।
এতে চুন শিল্প যেমন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে গ্যাস বিলের ন্যূনতম চার্জ ও বাণিজ্যিক গ্যাস বিল।
চুন উৎপাদনের কাঁচামাল চুনাপাথর প্রাপ্তিতে সংকট, উৎপাদিত চুন বিপণনে বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে কোনো কোনো চুন কারখানা বছরখানেক পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। এক্ষেত্রে সাময়িক বন্ধ থাকা কারখানাগুলো গ্যাস ব্যবহার না করেও ন্যূনতম চার্জের নামে মালিকদের কয়েক লাখ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বিষয়টিকে পেট্রো বাংলার অন্যায় ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন চুন উৎপাদন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। শিল্পহারে গ্যাসবিল পরিশোধের চুক্তি করলেও জালালাবাদ গ্যাস বিল নিতে চাচ্ছে বাণিজ্যিক হারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চুন শিল্পের গ্যাস বিল শিল্প হারে আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ ছাতকে শিল্প হার থেকে বাণিজ্যিক হারের গ্যাস বিল দিয়ে যাচ্ছে চুন শিল্প কারখানায়।
এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে ছাতক লাইম ইন্ডাস্ট্রিজ ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সভাপতি আব্দুল মমিন চৌধুরী রিট পিটিশন (নং-৯০৩০/১৯) দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর রিটের নিষ্পত্তি করে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ের কপি চেয়ারম্যান পেট্রো বাংলা ও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে।
রায়টি চুন শিল্প কারখানার পক্ষে থাকায় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২৪ মার্চ ছাতকের সীমা লাইম ইন্ডাস্ট্রিজের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর আগেও আনোয়ারা লাইম ইন্ডাস্ট্রিজ, একতা লাইম ইন্ডাস্ট্রিজের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গ্রাহকগণ শিল্প হারের গ্যাস বিল পরিশোধ করলেও বাণিজ্যিক হারে হিসেব ধরে বকেয়া বিলের কারণে তাদের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এতে ছাতকের চুন শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
চুন উৎপাদন শিল্পের মালিক রাকিব মিয়া চৌধুরী ও ছালিক মিয়া তালুকদার জানান, চুন বহুবিধ কাজে ব্যবহূত অত্যাবশ্যকীয় রাসায়নিক দ্রব্য। চিনিকল, পেপার মিল, সিমেন্ট কারখানাসহ বিভিন্ন কল-কারখানা, ট্যানারি ও চিংড়ি চাষের ঘের, দালান রংয়ের কাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুনের ব্যবহার অপরিহার্য। এখানের প্রতিটি চুন শিল্পের সাথে জালালাবাদ গ্যাসের শিল্পহারে গ্যাস বিল প্রদানের চুক্তি রয়েছে।
শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে বাণিজ্যিক হারের গ্যাস বিলের পরিবর্তে জালালাবাদ গ্যাসের চুক্তি অনুযায়ী শিল্প হারে বিল পরিশোধের পদ্ধতি চালুর দাবি জানান তারা। অন্যতায় ছাতকের চুন শিল্পগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে বলে নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন।