সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নিরীহ ৪ পরিবারের বাড়িঘরে হামলা, মারধর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উটেছে।
২৮(জুলাই) বুধবার রাতে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রসরাই ও নোয়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতের আধারে ঘুমন্ত নিরীহ পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে দেশী অস্ত্র ও দা দিয়ে কুপিয়ে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৫ জনকে আহত করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রসরাই গ্রামের মৃত বরকত আলীর পুত্র আবুল কাশেমের সাথে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিলো একই গ্রামের মৃত আমীর চানের পুত্র গোলাপ মিয়া ও মৃত হাছেন আলীর পুত্র ইয়াকুব আলীর সাথে। এরই জের ধরে রাতে গোলাপ মিয়ার নেতৃত্বে একদল অস্ত্র ধারী লাঠিয়াল বাহিনী আবুল কাশেম ও তার তিন আত্মীয়র বাড়িঘরে হামলা চালায়।
হামলার পূর্বে আবুল কাশেমের বসত ঘরের সিসিটিভির তার কেটে বাড়িঘর ভেংঙ্গে এলোপাথাড়ি বেধড়ক মারপিট করে। একই ভাবে গ আবুল কাশেমের আত্মীয়ের বাড়ি নোয়াপাড়া গ্রামে টিনছাউনীর আরও তিনটি ঘরে ভেঙে তছনছ করে দেয়। এসময় ১টি মোটরসাইকেলসহ নগদ অর্থ, আসবাবপত্র নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। এই ঘটনায় প্রতিপক্ষের দায়ের কুপে গুরুত আহত জহুর আলী (৩৫) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
এই হামলার ঘটনায় অন্য আহতরা হলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুছ সালাম (৬৫), রহিমা খাতুন (৪০), ফুল নেহার (৪৫), ফুল মেহের (৯৭), রায়হান (১৮), সামিয়া (০৮), আরব আলী (১৪), রমিজ উদ্দিন (৫০), সাহাব উদ্দিন (৬০), রমিজ উদ্দিন (৬০), জরিনা (৩৫), আবুল কাশেম (৫৫), আকি নুর(৩০), সানজিদা (১১), শহিদ মিয়া (৭), জুনায়েদ (৭) প্রমুখ।
শতবর্ষী নারী আবুল কাশেমের মা ফুল মেহের বলেন, আমি যখন ফজরের নামায পড়তে বসছি তখন গোলাপ তার বাহিনী নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় লাঠি সুলফি এবং ইট পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। ঘরের দরজা ও কাচের জানালা ভেঙে তারা আক্রমন করে। ভয়ে আমি চৌকাঠের ভেতর লুকিয়ে প্রাণ ছিলাম।
ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত জরিনা বেগম বলেন, আমার তখন ঘুম থেকে উঠার সময় হঠাৎ দেখি গোলাপের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন লোক ঘর ভাঙচুর করতে থাকে এবং এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে।বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুছ সালাম বলেন, ভোরে গোলাপ তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা করে। পুলিশ আসার পূর্ব পর্যন্ত আমরা ঘরবন্দী হয়ে থাকি।
আবুল কাশেম জানান, জমি নিয়ে আমাদের যে বিরোধ ছিলো তা নিষ্পত্তি হয় গেছে। এনিয়ে মামলা মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হয়ে উচ্চ আদালতের রায়ে অনেক দিন যাবত জমি ভোগ দখল করে আসছি। গত কয়েকদিন ধরে জমির দখল ছেড়ে দিতে আমাকে উৎপীড়ন শুরু করে আমার প্রতিপক্ষ । আমি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে আইনি সহায়তা চাইলে আমরা দুই পক্ষকে ডেকে কোন প্রকার সংঘর্ষে না জড়াতে নির্দেশ দেন। এর একদিন পার না হতেই তারা ভোর রাতে আমাদের উপর হামলা চালায়।
লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমীরুল হক বলেন, বিরোধের নিষ্পত্তি করার জন্য আজ সকালে সামাজিক বিচার সালিশ বসার কথা ছিল। কিন্তু তা না হবার আগেই একটা পক্ষ অন্যায়ভাবে নিরীহ পরিবারের উপর এভাবে হামলা চালিয়ে মারধর, ভাঙচুর ও বাড়িঘর তছনছ করে। আমি দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাই।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর বলেন, নিরীহ পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে মারধর ও বাড়িঘরের ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগের পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।