মোঃ সোলায়মান হাওলাদার
বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ
৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গৃহবধূ রাশিদা বেগমকে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন গ্রেফতারকৃত আসামিরা। এ হত্যাকাণ্ডে রাশিদার স্বামীসহ মোট তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, দেশি অস্ত্র, চারটি মোবাইল ফোন, রক্তমাখা জামাকাপড়, জুতাসহ লাশ বহনকারী টেম্পো।
গ্রেফতারকৃতরা শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) জেলার সহকারী জজ আদালতের বিচারক মো. মনিরুজ্জামানের আদালতে সোপর্দ করা হলে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামিরা হলো, রাশিদার স্বামী তামিম শেখ। তার বন্ধু কোটালীপাড়া থানার তারাশি গ্রামের ইদ্রিস দাড়িয়ার ছেলে রুবেল দাড়িয়া ও গোপালগঞ্জের বেত গ্রামের মৃত সালাম শেখের ছেলে মাহেন্দ্রচালক জুলহাস শেখ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে রাশিদা হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই আল আমিন শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা করেন।
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোছাইন জানান, ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে এই হত্যায় জড়িত হয় রুবেল ও জুলহাস। হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে ভাড়াটে এই দুই খুনি। তবে টাকা বাকি বলে জানিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, ‘‘গোপালগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল ‘রোহান’-এর ২০৭ নম্বর কক্ষে তারা অবস্থান করে। রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ৮টার দিকে হোটেল থেকে নেমে পরিকল্পনা অনুযায়ী রুবেল ও জুলহাস টেম্পোতে করে সদর থানার ঠুটামান্দ্রা বিলের মধ্যে নিয়ে যায় রাশিদাকে। জনশূন্য ওই বিলে রাশিদাকে টেম্পো থেকে নামিয়ে রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তারা। এরপর রুবেল ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাশিদাকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে।’’
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এর আগে স্বামী তামিম শেখ স্ত্রী রাশিদাকে হত্যার জন্য রুবেল ও জুলহাসের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকার চুক্তি করে। তবে তামিম চুক্তির এক টাকাও রুবেল ও জুলহাসকে পরিশোধ করেনি বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। রাশিদাকে হত্যার পর ১৯ জানুয়ারি রাতেই বরিশাল-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস এলাকায় ঘেরের পাড়ে লাশ এবং শিশু সন্তান তানিমকে ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতকরা।
এদিকে, রাশিদার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। রাশিদার ১০ মাসের সন্তান তানিমসহ তিন ছেলে বর্তমানে মামার বাড়িতে রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, দাম্পত্যে কলহের জেরে রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তামিম শেখ। রাশিদা ও তার স্বামীর এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তামিম ও রাশিদার আগের ঘরের দুটি করে ছেলেসন্তান ছাড়াও এ সংসারে একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। রাশিদা আগৈলঝাড়া উপজেলার ১নং ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় তিন ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
প্রসঙ্গত, খবর পেয়ে বুধবার গভীর রাতে উপজেলার বাইপাস মহাসড়ক এলাকা থেকে রাশিদার রক্তাক্ত লাশ ও তার শিশু সন্তানকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই তামিমের বাড়ি গোপালগঞ্জের বেত গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে রক্তমাখা পোশাকসহ আটক করা হয়।