দিরাই উপজেলা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় মোট নদ-নদীর সংখ্যা-২৪টি। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুশিয়ারা, কালনী,পিয়াইন, মরা সুরমা,ডাহুক। এছাড়াও এই উপজেলাটি হাওর বেষ্টিত। এখানকার উল্লেখযোগ্য হাওড়সমূহ হলো চাপতির, বরাম, উদগল , কালিয়াকোটা হাওর।
এই নদী ও হাওড়েতে গ্রীষ্মে শেষে ,অনেক দেরিতে ফিরে এসেছে নদী ও হাওরে যৌবন। প্রতি বছরেই এ মৌসুমে নদী ও হাওরয়ে জোয়ারের বা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কানায় কানায় ভরপুর থাকতো নদী ও হাওর গুলোতে। কিন্তু এবছর নদীতে অনেক দেরিতে দেখা মিলল যৌবন`কালে জোয়ারের পানি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল, উপজেলার হাওড়ে বর্ষা মৌসুমে হাওরে অনেক দেরিতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে খালবিল ও হাওরে দেখা মিলছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের হাওরের খালে-বিলে অবাধে চলছে রেণু পোনা নিধনের উৎসব। এসব এলাকায় পোনা নামে প্রায় ২৯ প্রজাতির রেণু পোনা, নিধন করছে কিছু অসাধু চক্র। এসব রেণু পোনা নিধনের কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। প্রতিদিন অন্তত সহস্রাধিক জেলে দিনরাত দিরাইয়ের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব রেণু পোনা নিধন করছে।
একশ্রেণীর অসাধু জেলে অবাধে সেই পোনা ধরে বাজারে বিক্রি করছে। জেলেরা যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রোজগার না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা পোনা ধরছেন। তবে পোনা রক্ষায় ওই জেলেদের আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয়রা বলছেন,অনেক দেরিতে হাওরে বর্ষার পানি ঢুকছে। বৃষ্টির পানিতে মাটিতে থাকা ডিম থেকে পোনা জন্মাচ্ছে। অসাধু জেলেরা প্রতিনিয়ত বেড়জাল, সুতিজাল, টানাজাল দিয়ে এসব পোনা ধরছেন। ফলে মাছের প্রজন্ম বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যদিও এসব বন্ধে প্রশাসন মাঝেমধ্যে হাটবাজারে অভিযান চালাচ্ছে; কিন্তু তা খুব একটা কাজে আসছে না। তাই এব্যপারে প্রশাসনের করা নজরধারির আহ্বান জোরদাবি জানান।
দিরাই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিকরীবাইম, টাকি, শোল, বোয়াল, পুঁটি, চিংড়ি, টেংরা, গজারসহ দেশি প্রজাতির পোনা বাজারে বিক্রি করছেন জেলেরা। দাম কিছুটা বেশি হলেও এসব মাছ কিনছেন ক্রেতারা। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, মাছের প্রজলনের সময় যদি এভাবে পোনা নিধন করা হয়, তা হলে দেশি মাছের ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান স্থানীয়রা
এদিকে জেলে আবুবক্কর জানান, বৈশাখী কৃষি কাজের পর এ সময়ে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়েই হাওরে নামেন। এবার অনেক দেরিতে হাওরে নতুন পানি আসায় এখন পোনা মাছই জালে উঠছে বেশি।
আরেক জেলে হাবিব মিয়া বলেন, আমরা জেলে, হাওরে যে মাছ পাই তা বিক্রি করেই সংসার চালাই। এখন যদি পোনা মাছ বিক্রি না করি তাহলে কি দিয়ে সংসার চালাব। তা ছাড়া এখন হাওরে পোনা ছাড়া অন্য কোনো মাছই ধরা পড়ছে না। এদিকে নিজুশ রায় গুলি বলেন সচেতন জনগণ যদি রেণু পোনা কিনা থেকে বিরত থাকেন ও প্রশাসনের নজরদারি থাকে তাহলে দেশীয় মাছের প্রজন্ম বৃদ্ধি পাবে।
দিরাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, পোনা নিধন বেআইনি কাজ, ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন হাওর ও বাজারে মোবাইল কোড পরিচালনা অব্যাহত আছে, এবং উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যনগনদের সাথে আমাদের মিটিং হয়েছে, মা মাছ ও রেণু পোনা, নিধন থেকে বিরত রাখতে পরামর্শ প্রধান করি। হাওরাঞ্চল কত প্রজাতির মাছ রয়েছে এমন প্রশ্নে মৎস্য কর্মকর্তা ১৪৩ প্রজাতির মাছ রয়েছে, যারা মা মাছ ও রেণু পোনা, নিধন কর্মকাণ্ড চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পোনা নিধন ঠেকাতে অভিযান চালানো হবে বলেও তিনি জানান।