সোহেল মিয়া (সুনামগঞ্জ)
প্রায় মাস খানেক আগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের হক নগরে প্রায় মাস খানেক আগে ড্রেনেজ কাঠামো মেরামত ও সংরক্ষণ উপ-প্রকল্পের কাজ শুর হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই ভেঙ্গে পড়েছে ড্রেন। রাজস্ব বাজেটের আওতায় ২৪১ মিটার সেচ ও নিকাশ ড্রেনেজ কাঠামো মেরামত ও সংরক্ষণ কার্যক্রমের জন্য ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দের উপপ্রকল্পটি শুরুতেই হুচট খেলো।
জানা যায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ পায়। প্রকল্পের কাজে ঠিকাদার সিরাজুল ইসলামের সাথে হক নগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদের অংশীদারিত্ব রয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ড্রেনেজ কাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা থাকলেও কাজটি শুরুই হয়েছে জুন মাসে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় ভারী বৃষ্টি পাতের কারণে কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্টো কাজ শেষ হবার আগেই ড্রেন ভেঙ্গে পড়েছে। এখনো পর্যন্ত ভাঙ্গা ড্রেন মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে হতাশ উপকারভোগীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হক নগরের আম্বর আলী ও মনির মেম্বারের বাড়ির সামনে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে ড্রেন। প্রায় ২০০ ফুট ড্রেনেজ কাঠামো ধসে আছে। বৃষ্টির পানিতে ড্রেনের ভেঙ্গে পড়া অংশের পার্শ্ববর্তী জমির মাটি ড্রেনের ভেতরে সরে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের শুরুতে কাজ না করে বর্ষা মৌসুমে কাজ ধরা হয়েছে। এলজিইডির কর্তাব্যক্তিরা সরেজমিনে তেমন আসেননা, অফিসে বসে থেকে দায়সারা ভাবে কাজের মান তদারকি করছেন। নিন্মমানের কাজের কারণে ড্রেন টেকানো যায়নি।
এদিকে ড্রেনেজ কাঠামো ধসে পড়ায় দুশ্চিন্তিত এই ড্রেনের আওতাধীন প্রায় ১ হাজার একর বোরো ফসলি জমির উপকার ভোগী পরিবার। দ্রুত টেকসই ভাবে ড্রেনটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। হক নগর গ্রামের বাসিন্দা আম্বর আলী বলেন, ‘খুবই নিম্ন মানের কাজ হয়েছে। ইটের গাঁথনিতে নামেমাত্র সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রেন ভেঙ্গে এখন আমার বাড়ির জমির মাটি সরে যাচ্ছে।’
হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ও ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, ‘ড্রেন ভেঙ্গে পড়ায় আমরা কাজের মান নিয়ে হতাশ হয়েছি। নিন্মমানের কাজ হয়েছে। ঠিকাদারের সাথে আলাপ করেছি। এলজিইডি অফিসকেও জানিয়েছি। দ্রুত ড্রেনটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানাই।’ সমিতির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল রাশেদ বলেন, ‘ড্রেনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় সমিতির সকল সদস্য সহ পুরো এলাকাবাসী আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু শুরুতেই আমাদেরকে হতাশ করেছে। সামনে কীভাবে বোরো ফসলের পানি পাব তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে।’ ইউপি সদস্য ধন মিয়া বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের বেশির ভাগ পরিবার এই প্রকল্পের উপকার ভোগী। সুষ্ঠু তদারকি হলে এবং ভালো মানের কাজ হলে ড্রেন ভেঙ্গে পড়ার কথা না। ড্রেনটি দ্রুত পুনঃনির্মাণ করা হোক।’
ঠিকাদারের সাথে কাজের অংশীদার ও হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল আহাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কোনো নিন্মমানের কাজ হয়নি। বন্যায় ড্রেন ভেঙ্গে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ড্রেন পুনঃনির্মান করা হবে।’
কাজের মান ও ড্রেনেজ কাঠামো ভেঙ্গে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্কিমের নিয়ম মেনেই কাজ করা হয়েছে। কাজের মানে কোনো ত্রুটি হয়নি। বৃষ্টির কারণে মাটির চাপে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ড্রেন ভেঙ্গে পড়েছে। এতে আমার প্রায় দুইলাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা সেচের পানি চলাচল রাখায় কাজ শুরু করা যায়নি। এখন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কাজ আগানো যাচ্ছেনা। দিন ভালো হলে আবার কাজ শুরু হবে। ড্রেন পুনঃনির্মাণ করেই হস্তান্তর করব।’
দোয়ারাবাজার উপজেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল বলেন, ‘ড্রেনেজ কাঠামোর নির্মাণ কাজ সুন্দর ভাবেই হয়েছিল। কিন্তু পাহাড়ী ঢলের কারণে পানি ও মাটির অতিরিক্ত চাপে বিচ্ছিন্ন কিছু অংশে ড্রেন ভেঙ্গে পড়েছে। ঠিকাদারের সাথে আলাপ হয়েছে। তারা আবার পুনঃনির্মাণ করে দেবে। আমারা সরেজমিনে কাজের মান তদারকি করছি।’
Leave a Reply