জাকির হোসেন সুমন সিলেট ব্যুরোঃ
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে একটি দীঘিতে কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য মেশার পর সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। পৌর শহরের সাগরদীঘিতে এ ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (২১ জুলাই) কোরবানীর ঈদের দিন থেকে হাতেগোনা মাছ ভেসে উঠতে থাকলেও আজ শুক্রবার পুরো দিঘীতেই মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখা যায়। দিনভর কাজ করেও দীঘির পঁচা মাছ অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। পঁচা মাছের দুর্গন্ধে দিঘীর চারপাশে থাকা বেশ কষ্টকর হয়ে উঠছে। শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে এই দীঘিতে মিশ্র মাছ চাষ করছিলেন হাজী আজিজুর রহমান দুলাল নামে এক ইজারাদার। সব মাছ মরে যাওয়ায় বেশ লোকশানে পড়তে হয়েছে তাকে।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) বিকেলে সাগরদীঘি পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরো দীঘিতে রুই, পাঙ্গাসসহ বড় বড় মাছ ভেসে উঠেছে। দীঘির চারপাশে এলাকায় মরা পচা মাছের দুর্গন্ধে থাকা কষ্টসাধ্য। বেশ কয়েকজন শ্রমিক নৌকা দিয়ে মরা মাছগুলো দীঘি থেকে উঠিয়ে নিচ্ছেন।
সেই মাছগুলো বস্তা বন্দি করে একটি পিকআপ ভ্যানে করে মাটি চাপা দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দীঘির চারপাশে বড় বড় মাছি ভনভন করে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটি বড় মোটর লাগিয়ে দীঘির পানিতে অক্সিজেন এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উৎসুক জনতা দীঘির জলে মরা মাছ দেখার জন্য দীঘির এক কোনে ভীড় জমাচ্ছেন।
স্থানীয় ইউসুফ মিয়া বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দীঘি থেকে যে গন্ধ বের হচ্ছে। তাতে এখানে থাকা বেশ কষ্ট সাধ্য। বাতাসে এই মরা মাছের গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
আশপাশের বাড়ি ঘরে থাকা মানুষরা অসুস্থ হয়ে পড়বে যদি দ্রুত মরা মাছ সরিয়ে নেয়া না হয়।
মরা মাছ দীঘি থেকে উঠানোর কাজ করার দায়িত্বে থাকা তিনজন কর্মী সংবাদকর্মীদের বলেন, সকাল থেকে দুটি নৌকা দিয়ে মরা মাছ উঠাচ্ছি। এত দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আমরা অনেক কষ্টে কাজ টা করছি। এখানে ২ কেজি থেকে ৪ কেজি ওজনের মাছই বেশি। মাছগুলো পচে যাওয়ায় মাছগুলো দীঘি থেকে উঠাতে কষ্ট হচ্ছে।
সাগরদীঘি মাছ চাষের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা জুয়েল মিয়া বলেন,কোরবানীর ঈদের দিন থেকে এখানে মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। এখানে রুই, কাতলা, পাঙ্গাসসহ মিশ্র মাছ চাষ করা হচ্ছিলো। এখানে সব মাছ বড় হয়েছিলো। আমাদের প্ল্যান ছিলো ঈদের পর মাছগুলো ধরে বিক্রয় করবো। কিন্তু এর আগেই দুর্ঘটনাটি ঘটলো। প্রথম দিন মানুষ রাত অব্দি অনেক মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আজ সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। আমার মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে পৌরসভার কাছ থেকে ইজারা নিয়ে আমরা মাছ চাষ করছিলাম। আমাদের শ্রমিকরা দীঘি থেকে পচা মাছগুলো তুলে গাড়িতে করে নিয়ে দূরে মাটি চাপা দিচ্ছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারাজুল কবির বলেন, সাগরদীঘির পাশেই কোরবানীর পশুর হাট বসেছিলো। সেখানে গরুর গোবর ও মুত্র ও বর্জ্য পদার্থ বৃষ্টির পানিতে দীঘিতে পরে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়। এই কারনে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে সেখানে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সব মরা মাছ তুলে সেখানের গ্যাস দূর করা হচ্ছে।
Leave a Reply