বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
আর মাত্র একদিন পরই পিতৃপক্ষের অবসান হবে। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া আগামীকাল বুধবার ভোরের আলো ফুটে উঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে দেবীপক্ষ। এ দিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। মহালয়া মানেই দুর্গাপূজার দিন গোনা শুরু হয়ে যাওয়া। মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেবীর আরাধনা সূচিত হয় মহালয়ার মাধ্যমে। পুরাণে আছে; দুর্গোৎসবের তিনটি পর্ব- মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা।
শ্রীশ্রী চন্ডীপাঠের মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই ‘চন্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া।
করোনার তাণ্ডবে গত বছর দুর্গোৎসবের আনন্দ অনেকটাই ফিকে ছিল। তাছাড়া মল/মলিন মাসের কারণে মহালয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার মাসখানেক পর শুরু হয় দুর্গোৎসব। শারদোৎসবের চিরচেনা দৃশ্য ছিল অনুপস্থিত। করোনা পুরোপুরি নির্মূল না হলেও এ বছর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তাই এবার আনন্দ উপভোগের সুযোগটা কিছুতেই হাতছাড়া করতে রাজি নন উৎসব প্রিয় বাঙালি।
মহালয়া কথাটির বিশেষ অর্থ রয়েছে। পিতৃপক্ষের অবসান বা দেবীপক্ষের পূর্ববর্তী অবস্থাকে বলা হয় মহালয়া। এই ব্যাপারে অবশ্য মতান্তর রয়েছে। ‘মহ’ শব্দটির অর্থ মানে ‘পূজা’, আবার ‘মহ’ বলতে উৎসবও বোঝায়। এছাড়া মহালয়া বলতে বোঝা যায় ‘মহান’ ও ‘আলয়’ নিয়ে মহালয়া। এর সঙ্গে ‘আ’ যোগ করে পূজার ‘আলয়’। ‘আলয়’ শব্দের অর্থ ‘আশ্রয়’। আবার মহালয় বলতে বোঝা যায় পিতৃলোককে, যেখানে স্বর্গত পিতৃপুরুষদের অবস্থান।
দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই দেবী দূর্গা স্বর্গ থেকে আগমণ ঘটেছিল মর্ত্য লোকে। এরই ধারাহিকতায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর শারদীয় দূর্গা উৎসব উদযাপন করেন৷ মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) মোংলার দুর্গাপূজা উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় এবারও বাগেরহাট জেলা মোংলা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা, উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে ৬অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দূর্গাপুজার শুভ সূচনা শুরু হবে। ১১ অক্টোবর উপজেলায় ৩৭ টি দুর্গা মণ্ডপে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পূজা শুরু হবে এবং শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুভ বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
সনাতন ধর্মে দেবীপক্ষকে বলা হয় সবচেয়ে শুভ দিন। এ সময় সব ধরনের শুভ কাজ সম্পন্ন করা যায়। পুরাণে আছে; অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। চারদিকে অশুভের প্রতাপ। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হলেন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। পুরাণমতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজোকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দুমতে অকালবোধনও বলা হয়। ধর্মমতে, এই দিনে দেব-দেবীকূল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। মহালয়ার দিন ভোরে মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডিপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয়। সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। এর ফল হচ্ছে ছত্রভঙ্গ। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। মহালয়া উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দির ও পূজা কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভোর থেকেই শুরু হবে চণ্ডিপাঠ, চণ্ডিপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’র মোংলা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস বলেন, সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পূজা উদযাপন করার লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ডপ পরিচালনা কমিটিকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী সক্রিয় ভূমিকায় মাঠে কাজ করবে বলে আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কৃর্তপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মোংলা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, করোনাকালীন সময়ে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের পাশাপাশি আনসার ভিডিপির সকল সদস্য সার্বক্ষণিক নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে করোনাকালে সব আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।
Leave a Reply