বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সারাদেশের মতো চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন, নীলফামারীতেও জমে উঠেছে। জেলার সৈয়দপুর উপজেলার ৫ টা এবং সীমান্ত লাগোয়া ডিমলা উপজেলার ৭ টা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এবার মোটামুটি এই ১২ টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ বিগত দিনের পরাজয় দেখে, যোগ্য প্রার্থী দেখে, মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জলঢাকা উপজেলার ৯টার মধ্যে ৬ টিতে নৌকা বিজয়ী হন। এবং নীলফামারী পৌর সভার মেয়র নির্বাচনে নৌকার জয়ের মধ্য দিয়ে, নতুন জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। শুরু হয়েছে নির্বাচনের শেষ উঠান বৈঠকের পালা। গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ অধীর আগ্রহে প্রার্থীদের কথা শুনছেন। ডিমলার সবচেয়ে বৃহত্তর ইউনিয়ন বালা পাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চলতি চেয়ারম্যান, নৌকার মাঝি জহরুল ভুইয়ার অবস্থা কিছুটা নাজুক হলেও, শেষমেশ বিজয়ী হবে, বললেন এলাকার বয়োবৃদ্ধ ছোট খাতা পাড়ার ওসমান গনি। ডিমলা সদরে নৌকার মাঝি হলেন, এই আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিনের সহোদর আবুল কাসেম পাগলা, তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শৈলন রায় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায়, বিপাকে পড়েছেন, এব্যাপারে ডিমলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি বাবু নীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, এই বিদ্রোহীদের অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার করলে, নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে, এবং জেলা আওয়ামী লীগ এবিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আশাকরি। সবচেয়ে বেশি ঝড় বইছে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে, এখানে নৌকার বিপক্ষের প্রার্থী খুবই শক্তিশালী আব্দুল লতিফ খান। তার সাথে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের একটা অংশের গভীর সখ্যতা রয়েছে, আর এটার পিছনের মুল কারণ, ভারতীয় গরু চোরাকারবারির একটা বিশাল অংশ অর্থ আদান প্রদানের। বিএনপির সময় বিএনপি এবং কৌশলে দল পরিবর্তন করে আবার আওয়ামী লীগে নিয়ে আসার পিছনেও রয়েছে, জেলার সেই গ্রুপটির কাজ। এবিষয়ে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ খান মিন্টু বলেন, চেয়ারম্যান যখন যার তখন তার, উনি ১৯৮৯ থেকে ৯১ পর্যন্ত জাতীয় ছাত্রলীগের কর্মী ছিলো, এবং ডিমলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমানের সময়ও ছাত্রলীগ করতেন সত্যি, কিন্তু ২০০২ সালে উনি বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি পলাতক শাহরিয়ার ইসলাম তুহিনের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন। এবং সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তারও পরিবর্তন ঘটে, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় সারাদেশের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় ওনার নামও লিপিবদ্ধ হয়। তারপরও ওনাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে কিন্তু যখন দেখলেন মনোনয়ন পাচ্ছেন না, তখন এলাকায় এসে আবার চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। এই বিষয়ে কলোনির হাটের মকবুল বলেন, এতোকিছুর পরেও জেলার নেতাদের সাথে তার দহরমমহরম প্রমাণ করে, এখানে তার ক্ষমতা প্রচন্ড। এ বিষয়ে নৌকার মাঝি আব্দুস সাত্তার সরকার বুলু বলেন, আমাকে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন, আমাকে মনোনীত করেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন এমপি মহোদয়, আমাকে মনোনীত করেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারি মহোদয়, তাই আমি কোনকিছুই ভয় করিনা। গোটা বাংলাদেশের মধ্যে একটা ইউনিয়ন পরিষদ, যেখানে রাস্তা ঘাটের অবস্থা দেখলে মনে হয় আদিম যুগে পড়ে আছে। এই ১৯ বছরে কোন উন্নয়ন দেখাতে পারেনি, তাই একটিবার নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন। এবং বলেন খুব শীঘ্রই বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিরোধিতাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দ। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক সরকার। তিনি বলেন, যদি আওয়ামী লীগের সরকার এবং আমি এলাকার উন্নয়ন করে থাকি তাহলে বাকি কাজটুকু সমাপ্ত করার জন্য আবারও নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানান। সৈয়দপুর উপজেলার ৫ টা ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে কামার পুকুর ইউনিয়ন এবং কাশি রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা এগিয়ে রয়েছে। কাশি রাম বেল পুকুর ইউনিয়নের বাগিচা পাড়ার হেলাল আলী বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে সবচেয়ে ভালো প্রার্থী হলেন, গোলাম রাকিব সোহন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। এবিষয়ে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামান বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে, এবং ইনশাল্লাহ ২৬ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ১২ টার মধ্যে সবকটাতে নৌকা বিজয়ী হবে। আর বিদ্রোহীদের ব্যাপারে খুব শীঘ্রই ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply