তৌহিদুল ইসলাম সরকার,ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের-হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়,এখানকার মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম বন্যহাতি। হাতির তান্ডবে সীমান্তে একের পর এক ঝরছে তাজা প্রাণ। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে হাতির বিশাল পাল খাবারের সন্ধ্যানে লোকালয়ে নেমে এসে ধানের জমিসহ মানুষের বাড়ি-ঘরের আম,কাঁঠাল,কলাসহ বিভিন্ন ফসলের গাছ ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করছে। প্রতিটি হাতির পাল খাবারের সন্ধ্যানে হালুয়াঘাট উপজেলার গোবড়াকুড়া থেকে রঙ্গমপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ কিলোমিটার এলাকার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়ায়। হাতির আতঙ্কে সীমান্ত এলাকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন শত শত নারী-পুরুষ। সীমান্তের মানুষের এ লড়াই বন্ধে কার্যকর কোনো সমাধান আজও পর্যন্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় গাজিরভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ও স্থানীয়রা জানান,২০০১ সালে থেকে হাতির আক্রমণ শুরু হলেও তা ছিল খুবই সামান্য। তখন হাতে গোনা কয়েকটা হাতি লোকালয়ে প্রবেশ করে একদিন পরেই আবার চলে যেতো। কিন্তু ২০১৫ সালে থেকে ভারতে মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে দলবেঁধে প্রবেশ করে ১২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত মানুষের ফসল ও অন্যানো সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে যায়। কিন্তু দুই বছর ধরে প্রায় নিয়মিত তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে হাতির পাল। এখনো হাতির তান্ডব অব্যাহত আছে।
এ অবস্থায় ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ। প্রতিবছর বিশেষ করে ধান ও কাঁঠাল পাকার মৌসুমে আসলেই বন্য হাতি দল বেঁধে এসে লোকালয়ে হানা দেয়। ৮ বছর ধরে সীমান্তের বাসিন্দারা কোনো ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারেন না। ধান ও কাঁঠাল পাকার সময় হাতির আক্রমণ বেড়ে যায়। সর্বশেষ গেল রমজান ঈদের দিন, ঈদের ২য় দিন ও গতকাল মঙ্গলবার রাতে হাতির তান্ডবে দুই যুবকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজন হলেন গাজিরভিটা ইউনিয়নের কাটাবাড়ী গ্রামের ফরজুল ইসলাম (২৮) ও ধোবাউড়া সীমান্তের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের সুমন (১৯) ও গাবরাখালী সীমাবর্তী কান্দাপাড়া এলাকার তৈমুর রহমানের ছেলে পল্লী চিকিৎসক ইদ্রিস আলী (৫০)। নিজেদের ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যান তারা। আর আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যখন হাতির আক্রমণে কেউ মারা যান শুধু সে সময়েই প্রশাসনের লোকজন খোঁজখবর নিতে আসে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাত্র কয়েক হাজার টাকা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। মূলত স্থায়ী কোনো সমাধানের উদ্যোগ কখনো নেয়া হয় না। বন বিভাগের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
Leave a Reply