তৌহিদুল ইসলাম সরকার, স্টাফ রিপোর্টার:
রাত শেষে প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই জমে ওঠে দৈনিক কৃষি শ্রমিকের হাট। আবার স্থানীয় ভাষায় এ হাটকে বলা হয় ‘কামলার হাট’। কেউ কেউ আবার একে বলে ‘কৃষি শ্রমিকের হাট’ও বলে থাকে। যেখানে দরদাম করে বেচাকেনা হয় মানুষের! কিছুটা অদ্ভুত শোনালেও প্রতিদিন ভোরে এমনই ব্যতিক্রম হাট বসে নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নে হেমগঞ্জ (ঝালুয়া বাজার) নামক স্থানে। তবে দাস কিংবা পণ্য হিসেবে নয়, মানুষের বেঁচা-কেনা হয় শ্রমিক হিসেবে। দৈনিক, সাপ্তাহিক কিংবা চুক্তি অনুযায়ী নিজেদেরকে বিক্রি করেন শ্রমিক ও কৃষকরা।
গ্রামে ঠিকমতো কাজ পাওয়া যায় না মজুরিও কম। তাই পরিবারের অভাব-অনটন মেটাতে কাজের সন্ধানে নিজের জেলা ছেড়ে,ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নে
হেমগঞ্জ (ঝালুয়া বাজার) নামক স্থানে ব্রিজের উপরে বসে দৈনিক শ্রমিকে হাটে জড়ো হন অনেক শ্রমিক।
গাইবান্ধা জেলার সাব্বির বলেন, আমরা প্রতিবছর এসময় চলে আসি। প্রায় ৬ মাস এখানে থাকি। এবার ১০ জন এসেছি। বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। রোজ ৮০০ টাকা দাম হাঁকি। কিন্তু বাজারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বলে। বাজার ভালো থাকলে কোনো কোনো সময় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা রোজে কাজ করি।
দৈনিক শ্রমিক হাটে আসা সুমন নামের একজন বলেন,আমি রংপুরের বাসিন্দা। কাজ খুঁজতে সন্তানসহ তিনি এক মাস ধরে নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নে দৈনিক শ্রমিক হাটে আসেন। শুধু সুমন নন, তাঁর মতো এমন অনেক শ্রমিক রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে আসেন কাজের সন্ধানে।এ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চালান তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক তিনি বলেন, মালিকরা বিকেল পর্যন্ত কাজ করা লাগবে বলে নিয়ে যায়। পরে মাগরিবের পরে ছাড়ে।জমির মালিকরা সকালে রুটি, দুপুরে ভাত খাওয়ায়। এখানে কাজের মূল্যায়ন নেই। কে কাকে ঠকাতে পারে সেটাই ভালো যানে।
তিনি আরোও বলেন, ছয় বছর ধরে এই হাটে তাঁরা শ্রম বিক্রির জন্য আসেন। কৃষিজমি পরিষ্কার, ধান কাটা,ধান মারাইসহ দিন চুক্তিতে সব ধরনের কৃষিকাজ করেন তাঁরা। ছয় মাস চলে তাঁদের কাজ। যে টাকা আয় হয়, সেটা দিয়ে সারা বছর সংসার চালান তাঁরা।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নে
হেমগঞ্জ (ঝালুয়া বাজার) নামক স্থানে ব্রিজের উপরে বসে দৈনিক শ্রমিকে হাট। এই হাটে জড়ো হন অনেক শ্রমিক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা এসব শ্রমিকদের মধ্য থেকে দরদাম করে জমির কাজের জন্য শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক শ্রমিক দিন চুক্তিতে কাঙ্ক্ষিত মূল্যে কাজ করতে দর–কষাকষি করছেন।
প্রথম দিকে দৈনিক শ্রমিক হাটে ১০০ থেকে ২০০ জন শ্রমিক এখানে আসতেন। পরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে কৃষিজমি ও কাজ কমতে শুরু করায় হাটে শ্রমিক আসা কমে গেছে। এখন সাত থেকে আট শ শ্রমিক প্রতিদিন এখানে শ্রম বিক্রি করতে আসেন।
কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তাঁদের কাজের চাহিদা বেশি থাকে। এই সময় তাঁরা নান্দাইল ও সদর ইউনিয়নের আশপাশের স্কুলের বারান্দা, নদীর পাড়ে অস্থায়ী বসতি করে থাকেন।
তবে পারিশ্রমিকের দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উত্তরবঙ্গের এসব শ্রমিকদের। তারা অভিযোগ করেন, স্থানীয় শ্রমিকদের তুলনায় তাদের কম পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে। অথচ তারা একই পরিশ্রম করছেন।
তিনি আরোও বলেন, প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার আগে তাঁরা শ্রম বিক্রির হাটে এসে বসে থাকেন। কখনো কাজ পান, কখনো পান না।
# তৌহিদুল ইসলাম সরকার স্টাফ রিপোর্টার:
০১৩১১-২৮৭০৭৩
০৭/০৫/২৩ইং
Leave a Reply