মোঃ সাফায়েত ইসলাম ::
আওয়ামী লীগের নেতাদের উৎপাত ও হয়রানী শহর থেকে ছড়িয়ে গ্রামীণ জনপদেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
ক্ষমতার দাপটের ফলে দীর্ঘ বছর ধরে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন যেন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে সেই দাপট ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
আর হয়রানীর শিকার মানুষগুলো পরাধীনতা থেকে বেরিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দীর্ঘ ক্ষোভ আর চাপা কান্না যেন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। বেরিয়ে আসে অসাধু ব্যক্তিদের নানা অপকর্ম ও রাজনৈতিক প্রভাবে খাটানো নানা নেতিবাচক কর্মকান্ড।
বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্ৰামের ভুক্তভোগী মানুষগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে হয়রানীর নানা অভিযোগ অকপটে বলে যাচ্ছেন সর্ব মহলে। বিচারের দাবিতে দ্বারস্থ্য হচ্ছেন নানা মাধ্যমে।
তথ্য দিয়েছেন জাগুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল সরদার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নানা অপকর্ম ও হয়রানীর বিষয়ে। যিনি পতন হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকাজুড়ে ত্রাস ও দাপুটের রাজত্ব চালিয়ে গেছেন। হয়রানী করেছেন সাধারণ মানুষদের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সাথে সাথে এই অভিযুক্তকে আর এলাকায়ও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযুক্ত জামাল সরদার চন্ডিপুর গ্ৰামের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জালাল সরদারের ছেলে । তিনি জাগুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরে আলম চান্নুর হাত ধরে রাজনীতিতে পথচলা শুরু করেন। বিগত কয়েক পূর্বে চেয়ারম্যান চান্নুর ইন্তেকালের পর জামাল হয় উঠেন বেপরোয়া এলাকায় গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। তার ক্যাডারবহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাহ কামাল, সুমন, সুজন মেম্বার, কবির মেম্বার সহ অনেকেই।তারা
এলাকার অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালুর ব্যবসা মাদক ব্যবসা, মানুষের জমি দখলসহ এমন কোন কাজ নেই জামালের বাহিনীরা এতদিনে করেন নাই। অত্র এলাকার শান্তি প্রিয় মানুষকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে
বিভ্রান্ত ও বিপদে ফেলে ব্লাক-মেইলের মাধ্যমে অর্জন করেছেন লাখ লাখ টাকা। যার প্রমাণ মিলেছে সরেজমিন থেকে প্রাপ্ত ভুক্তভোগীদের একাধিক সাক্ষাৎকারে।
অভিযুক্তের বিদ্যালয়ের সম্মুখে তথ্য সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের কাছে নানাবিধ অভিযোগের কথা জানান ভুক্তভুগীরা। অভিযুক্ত জামালের হয়রানীতে অতিষ্ঠের শিকার হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।।
আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ও নিজেকে দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। কখনো টিউবওয়েল দেয়ার প্রলোভন, আবার কখনো ভিজিডি-ভিজিএফ, বিধবা ভাতা , আশ্রয়ণের ঘর সহ সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে হাতিয়েছেন বিপুল অর্থ।
একাধিক আব্দুল লতিফ ও জাকির জানান, স্থানীয় এক হতদরিদ্র আব্বাস নামের এক যুবকের কাছে থেকে সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন ১৫ হাজার টাকা। যদিও আজ অবধি সেই ঘর পাননি আব্বাস।
প্রলোভন অনুযায়ী কোন কিছুই দিতে না পারায় একাধিকবার জনরোষেও পড়েছিলেন অভিযুক্তরা। তবুও তথা-কথিত আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত-বিএনপিতে এমন তথ্য দিয়ে একাধিক মানুষকে হয়রানীর। কাউকে জামায়াত কর্মী আবার কাউকে ন বিএনপি’র নেতা আখ্যা দিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিবেন এমন ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতো তিনি।
জাকির নামের এক ভুক্তভুগী জানান, ২০১৭ সালে আমাকে জামায়াত কর্মী বলে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয় জামাল। এর আগে আমার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছিলেন তিনি। দিতে ব্যর্থ হওয়াতে আমাকে হয়রানীর শিকার হতে হয়। মিথ্যা ঐ মামলা আমাকে কারাগারেও থাকতে হয় দীর্ঘ বছর। তার সাথে থানার কর্মকর্তাদের সখ্যতা থাকায় সহজেই পুলিশ দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অনেক মানুষকে ধরিয়ে দিতো তিনি।
স্থানীয় খলিল জানান, আমার ছোট ভাই ইসমাইল-কে জামায়াত কর্মী আখ্যা দিয়ে ধরিয়ে দিবে বলে জানায় জাহিদ। ইসমাইল কখনো কোন দলে নিজেকে সম্পৃক্ত রেনি। অহেতুক হয়রানী করে অবৈধ উপায়ে অর্থ হাতানোই ছিল জাহিদের ধান্ধা। একপর্যায়ে জাহিদ জানায়, তাকে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে । পুলিশ ম্যানেজ করতে হবে। ভীত হয়ে ইসমাইল তাকে টাকা দিয়ে দেয়।
কৃষকদলের মাজেদ নামের এক নেতা জানান, আমাকে পরপর ২০১৩, ১৮ ও ২৩ সালে মিথ্যা অভিযোগ এনে ধরিয়ে দেয় জাহিদ। এছাড়া আমার সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাতিয়েও নেয় তিনি।
এমনকি চলতি বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২ প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে জামাল সরকারের নেতৃত্বে সুজন মেম্বার, শাহ কামাল,সুমন, জেবিক, কামরুল সহ
কয়েকজন সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় সেদিন রাতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা করলে পরদিন জামালের সহযোগী সুজন মেম্বারকে চন্ডিপুর হাই স্কুলের সামনে থেকে গ্রেফতার করে কোতয়ালী থানার পুলিশ।
এদিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামালের নেতৃত্বে এলাকায় পরিচালিত হতো মাদক ও জুয়ার বিশাল সিন্ডিকেট। পুলিশকে ম্যানেজ করে তিনি এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিতেন। মোটকথা জাগুয়া ইউনিয়নবাসী জামাল ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। সরকার পতনের পর এখন পলাতক রয়েছে। এলাকার শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ জামালকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
Leave a Reply