মোঃ-আলমগীর হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি,,দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে শীত পড়তে শুরু করেছে। আর শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণে চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন।
যারা খেজুরের রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে গাছ কাটায় পারদর্শী স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে গাছি বলা হয়। এ গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন।
কয়েক দিন পরই গাছিদের মাঝে খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যাবে। শীত মৌসুম এলেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হয়। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ অঞ্চলের গাছিরা। তাদের মুখে ফুটে ওঠে রসালো হাসি। শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও নলেন গুড়ের গন্ধ। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে বোঝানো যায় না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েসতো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রসের তৈরি খাদ্যের আয়োজন চলে। শীতের সকালে বাড়ির উঠানে বসে সূর্যের তাপ নিতে নিতে খেজুরের মিষ্টি রস যে পান করেছে, তার স্বাদ কোনো দিন সে ভুলতে পারবে না। শুধু খেজুরের রসই নয় এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি, গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার। খেজুর গুড় বাঙালির সংস্কৃতিক একটা অঙ্গ। নলেন গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।
স্থানীয়রা বলছেন, আর মাত্র কয়েক দিন পরই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে। রস থেকে গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। হেমন্তের প্রথমে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও গুড়। অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছের কদর এখন অনেক বেশি।
এক সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ঈশ্বরদী, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা ও জীবননগর, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর, খালিশপুর ও কালিগঞ্জ এবং যশোর জেলার খেজুর রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল।
খেজুর গাছের রস হতে উৎপাদিত গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদাও ছিল ব্যাপক। এসব হাট-বাজার থেকে প্রতিদিন ২-৩ শ’ ট্রাক ভর্তি গুড় দেশের বিভিন্ন যায়গায় রফতানি হত। এমন কি দেশ বিভাগের পূর্বে চুয়াডাঙ্গা জেলায় খেজুর গুড়ের বিশাল চাহিদা ছিল।
Leave a Reply