করোনায় সরকারি বিধিনিষেধ বাঁধা মানছে না জাফলংয়ে আগত পর্যটকরা।
সিলেট ব্যুরোঃ
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বেসামাল পর্যটকদের ভিড় করোরা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি বিধিনিষেধে সারাদেশের পর্যটন কেন্দ্রের মত গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক ও বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি সৌধে পর্যটকের প্রবেশ ও ঘোরাঘুরিতে ছিল নিষেধাজ্ঞা।
যে কারণে বন্ধ ছিল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এমন বাস্তবতায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ ফটক বন্ধ থাকায় ভিতরে প্রবেশ করতে না পারলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে উদ্যানের ভেতরের কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক আর মাধবপুর চা বাগান লেকসহ বিভিন্ন চা বাগানের লেক ও টি প্লান্টেশন এলাকায় উপচেপড়া ভিড় ছিল পর্যটকদের।
আগত পর্যটকরা মানেননি কোন স্বাস্থ্য বিধি ও কোন বাঁধা। ফলে মাধবপুর লেক এলাকায় শুক্রবার ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আসা পর্যটকদের ছিল অবাদে দল বেধে প্রবেশ আর ঘোরাঘুরি শুরু হয় জাফলং সহ সিলেট বিভাগের সকল পর্যটক স্পোর্ট গুলোতে দেখা যাচ্ছে পর্যটকদের ভিড়।
একই অবস্থা ধলই চা বাগানে বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি সৌধ এলাকা, শমশেরনগর চা বাগানের লেক, শমশেরনগর চা বাগান গল্ফ মাঠ, ফুলবাড়ি চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানের পাহাড়ি উঁচু নিচু এলাকার। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এখান থেকে ওখানে ঘুরে বেড়িয়েছে তারা।
শুক্রবার বিকেলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকায় ও নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্কতায় কোন পর্যটক ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যক্তিগত কার, মাইক্রোবাস ও পিকআপে করে আসা পর্যটকরা উদ্যানের বাইরে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের পাহাড়ি এলাকায় ঘোরাঘুরি করে ছবি তুলেন।
বেশ কয়েকটি পিকআপে মাইক লাগিয়ে নাচ গান করতে দেখা যায় কম বয়সী পর্যটকদের। এসব পর্যটক আবার পরবর্তীতে মাধবপুর লেকে গিয়ে ভিড় করেন।
মাধবপুর চা বাগান লেক এলাকা গেলে দেখা যায়, লেকে যাবার আগে ২টি স্থানে চা বাগানের ফটক রয়েছে। ফটকে পর্যটকদের ব্যবহৃত যানবাহন আটকানোর চেষ্টা করলেও পর্যটকরা বিশেষ করে কম বয়সী পর্যটকরা কোন প্রকার বাঁধা মানছেন না।
মাধবপুর চা বাগান কারখানা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে তিন দিকের উঁচু পাহাড়ি টিলাবেষ্টিত লেকে পর্যটকরা দল বেধে যাতায়াত করছেন।
লেক এলাকায় চা গাছ আচ্ছাদিত টিলায় পর্যটকরা উঠে ছবি তুলছেন। উপর থেকে আবার নিচের লেকের সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্ধী করছেন। এসময় কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি তাদের। এমন অবস্থায় দেখা যায় জাফলংয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যটকের মুখেও ছিল না কোন মাস্ক।
চা বাগান সূত্রে জানা যায়, সকালের দিকে একবার পুলিশ এসে লেকে আসা কম বয়সী উশৃঙ্খল পর্যটকদের তাড়িয়ে দিলেও দুপুরের পর আবার তাদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। মাধবপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ উপচেপড়া পর্যটকদের কাছে অনেকটা অসহায় বোধ করছেন।
নারী-পুরুষ ও শিশু সম্বলিত পর্যটকরা ঈদের ছুটির আনন্দ উপভোগ করতে ছিলেন ব্যস্ত। করোনা সংক্রমণকালে স্বাস্থ্যবিধি না মেয়ে এভাবে অবাদে চলাচলে তারা যে, ঝুঁকির মাঝে আছেন তা জেনেও কোন বাঁধা মানছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পর্যটক বলেন, ‘দীর্ঘদিন তারা সন্তানদের নিয়ে অনেকটা গৃহবন্দি ছিলেন। ঈদের ছুটিতে এসব সন্তানদের অনুরোধে পরিবার সদস্যদের নিয়ে বাধ্য হয়ে মাধবপুর লেকে ও জাফলংয়ে বেড়াতে এসেছেন।
মাধবপুর লেকের পাহারাদার লক্ষ্মী নারায়ণ বলেন, লেকে প্রবেশ নিষেধ বলে আগত পর্যটকদের প্রবেশে বাঁধা দিয়েও তিনি একা তাদের আটকাতে পারছেন না।
তবে মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, তিনি কমলগঞ্জ থানার ওসিকে অনুরোধ করে ঈদের দিন শুক্রবার কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে এনেছিলেন মাধবপুর লেক এলাকায়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে সরকারি নির্দেশনায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া বনকর্মী, কমিউনিটি পেট্রোলিং কমিউনিটির সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় থাকায় লাউয়াছড়া উদ্যানে কোন পর্যটক প্রবেশ করতে পারেনি।
তবে অসংখ্য আগত পর্যটক উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়ায় কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের বেশ কিছু এলাকায় অবস্থান নিয়েছে ও ঘোরাঘুরি করেছে। আর পরবর্তীতে এসব পর্যটকরা আবার মাধবপুর লেক ও জাফলং গিয়ে ভিড় করে।
Leave a Reply