হাকিকুল ইসলাম খোকন ,সিনিয়র প্রতিনিধ:
চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বৃক্ষরোপণ করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, ক্যাব যুব গ্রুপ , লায়ন্স ও লিও ক্লাব অব প্রগ্রেসিভ ওয়েস্ট। ১৭ জুলাই ২০২১ নগরীর সিআরবির সাত রাস্তা মোরে আয়োজিত মানব বন্ধনে সংহতি জানিয়েছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব চট্টগ্রামের উপদেষ্ঠা ও বিশিষ্ট পরিবেশ গবেষক ড.ইদ্রিস আলী, ক্যাব কর্নেলহাট উপজেলা সভাপতি ডাঃ মাসবাহ উদ্দীন তুহিন, সাধারন সম্পাদক দিদার প্রদান, ক্যাব পাচলাইশের সাধারন সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব চান্দগাও সভাপতি জানে আলম, ক্যাব হালিশহর সভাপতি এমদাদুল করিম সৈকত, ক্যাব বন্দর-পতেঙ্গার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী, ক্যাব জামালখানের সাধারন সম্পাদক নবুয়াত আরা সিদ্দীকি, ক্যাব চকবাজারের হেলাল চৌধুরী, ক্যাব নেতা সেলিম সাজ্জাদ, শাহীন শিরিন, লায়ন্স ক্লাব অব প্রগ্রেসিভ ওয়েস্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ববি বড়ুয়া প্রমুখ।
বক্তাগন আরও বলেন বলেন সিআরবি চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক অক্সিজেনের কারখানা। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে শুধু হাসপাতালই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনাই করা উচিত নয়। হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন শিল্পের নামে পাহাড়, রেলওয়ের ভ‚মি দখলে ব্যবসায়ীদের ষডযন্ত্র বন্ধ করার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীসহ সরকারের সং¯িøষ্ঠ মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সাথে চট্টগ্রামের ফুসফুস ও বুকভরে নিঃশ^াস নেবার স্থানটিকে ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষনের দাবি জানিয়ে অবিলম্বে এ ধরণের হটকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহবান জানান । নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চট্টগ্রামে হাজার বছরের গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম এই উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিসরটি নগরীর লক্ষ লক্ষ মানুষকে সতেজ শ^াস নিতে সহায়তা করেছে। যার কারনে সংস্কৃতি অংগন ও বিনোদনের অন্যতম তীর্থস্থানে পরিনত হয়েছে এই সিআরবি। যা চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংগে মিশে আছে। হাসপাতাল করতে হলে বন্দর হাসপাতাল, টিভি হাসপাতাল, হাজী ক্যাম্প ও রেলওয়ের অনেক অবৈধ দখলী ভ‚মিতে করা যায়।
বক্তাগন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদেরকে শিল্প স্থাপনের নামে প্রতিনিয়তই বিপুল পরিমান সরকারি ভ‚মি, পাহাড়, স্থাপনা নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দিচ্ছেন। আর নগরবাসীর এই জায়গায় পাহাড়, টিলা ও মানুষের শ্বাস নেবার স্থানটুকুও বাদ যাচ্ছে না। সিআরবি চট্টগ্রামের কার্বন শোষণের প্রাকৃতিক কারখানা। হাসপাতাল করার জন্য চট্টগ্রামে অনেক জায়গা থাকলেও শতবর্ষী গাছ, পাখির কোলাহল, বসার জায়গা, হাঁটাহাঁটির পথ, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে কংক্রিটের ভারী স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন খুবই দুঃখজনক। আর প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল কেন শহরের মাঝখানে স্থাপন করতে হবে, তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মতপ্রকাশ করেন।
বক্তাগন বলেন অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মানুষের বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগও ক্রমাগত ভাবেই কমে যাচ্ছে। নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংস, পাহাড় কাটা ও ধ্বংসের মহাযজ্ঞ চলছে চট্টগ্রামে। ইতিপূর্বে শিল্প স্থাপনের নামে বৃহৎ শিল্পগ্রুপ অনেকগুলি পাহাড়, প্রাকৃতিক নৈষর্গিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। সার্কিট হাউজকে ধ্বংস করে শিশু পার্ক, সংস্কৃৃতি অংগনের ঐতিহাসিক স্থাপনা ডিসি হিল এখন আর সাংস্কৃতিক আয়োজন করা যায় না। তাই বৃহৎ শিল্পগ্রুপের কংক্রিটের আগ্রাসন রোধে এখনই সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার আহবান জানিয়ে নগরবাসীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে সিআরবিতে হাসপাতাল স্থাপন থেকে সরে আসার দাবি জানান। পরে নেতৃবৃন্দ হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থানে বৃক্ষরোপণ করেন।
Leave a Reply