বায়জিদ হোসেন, বাগেরহাট প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ’র প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর পাড়ের সুন্দরবনের দুবলার চরের শুটকি ব্যবসায়ীরা। গত তিন-চার দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ফুটের অধিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দুবলার চর। ফলে চরে শুকানোর জন্য রাখা প্রায় ২০ লাখ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। এতে রাজস্ব আয়ের ঘাটতিতে পড়েছে বনবিভাগও। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলা জেলে পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় বলেন, ঘূর্নিঝড়ের কারণে তিন-চারদিন ধরে তিন ফুটের অধিক জোয়ারের পানিতে দুবলার চর তলিয়ে যাওয়ায় জেলে-মহাজনদের প্রায় কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় জেলেরা জাল, নৌকা-ট্রলার নিয়ে চরে অবস্থান করছে। খারাপ আবহাওয়ায় মাছ শুকাতে না পারায় সেগুলো পঁচে যাচ্ছে। এর আগে প্রচুর মাছ হচ্ছিল জেলেদের।
গত নভেম্বর এ চরের শুটকি থেকে ৫৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, আর ডিসেম্বরে টার্গেট ছিল ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা আয়ের। কিন্তু ক্ষতির কারণে অর্ধেকে নেমে আসবে রাজস্ব আয়। চরটিতে জেলে ও মহাজন মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার লোক রয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ শুটকি মৌসুম চলবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত। এদিকে জাওয়াদের প্রভাবে সোমবারও মোংলা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। সোমবার ভোর থেকে থেমে থেমে গুড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে হালকা বাতাসও। আকাশ মেঘাচ্ছন্নের পাশাপাশি কুয়াশা বাড়ায় শীতও যেন জেঁকে বসেছে। তবে বন্দরে অবস্থানরত খাদ্য শস্যসহ অন্যান্য পণ্যবাহী বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামা ও পরিবহণের কাজ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখরউদ্দীন। এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে সুন্দরবন। গতকাল রোববার ও আজ সোমবার সুন্দরবনের ৮ টি প্রধান প্রধান পর্যটন স্পট বলতে গেলে একেবারেই পর্যটক শূন্য ছিল। শনিবার দুপুর থেকে উপকূলীয় এলাকায় এখন পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সাগর রয়েছে বেশ উত্তাল। উপকূলীয় নদনদী গুলোতেও পানির চাপ ও স্রোত বেড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে উপকূল জুড়ে। স্বাভাবিক সময়ে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশী। আজ করমজল পর্যটন কেন্দ্র একেবারেই ফাঁকা ছিল।
করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ জানান, প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক এখানে আসেন। কুমির প্রজনন কেন্দ্র, বনের ভিতরে কাঠের ওয়াকওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, চিড়িয়াখানা, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন। তাছাড়া এখানে আসতে মোংলা থেকে পশুর নদী পার হয়ে আসতে ঘন্টা খানেক সময় লাগে। তাই পর্যটকদের নৌ ভ্রমনও হয়ে যায়। বৈরী আবহাওয়ায় করমজলে আজ পর্যটকের ভিড় নেই। দু তিন দিনের মধ্যে আবহাওয়ার উন্নতি হলে ভ্রমন পিপাসুরা আসবেন। হিরন পয়েন্টে অবস্থিত মোংলাবন্দর পাইলট রেস্টহাউজ সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিন ধরে পর্যটক শূন্য রয়েছে স্থানটি। সুন্দরবনের কোকিলমুনি, দুবলার চর, হারবারিয়াসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র সূত্রে একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, মোংলা বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছে বৈরী আবহাওয়ায় কোনো পর্যটক সুন্দরবনে আটকা পড়েননি।
Leave a Reply