নিউজ ডেস্ক
বাতজ্বর ( Rheumatic fever) হলো প্রদাহজনিত রোগ যা হার্ট, চর্ম, জয়েন্ট, মস্তিষ্ক কে আক্রান্ত করতে পারে। এই রোগ সাধারণত গলায় সংক্রমণের দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে শুরু হয়। লক্ষণসমূহ হচ্ছে জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা,কোরিয়া, ইরায়থেমা মারজিনেটাম। প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে হার্ট আক্রান্ত হয়।
প্রতিবছর প্রায় ৩২৫০০০ জন শিশু বাতজ্বরে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১৮ মিলিয়ন লোক বাতজ্বর সংক্রান্ত হৃদরোগে আক্রান্ত। বাতজ্বর রোগীদের বয়স সাধারণত ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।তবে ২০% ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্করাও প্রথমবারের মত আক্রান্ত হতে পারে।
এই জ্বর সাধারনত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস নামক এক ধরনের জীবাণুর আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। দারিদ্র্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এবং অজ্ঞতাই এ রোগের প্রধান কারণ। যেসব শিশুর দীর্ঘ দিন ধরে খোসপাঁচড়া ও টনসিলের রোগ থাকে, তাদের বাতজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
বাতজ্বরের কিছু মুখ্য ও কিছু গৌণ লক্ষণ রয়েছে। দুটি কিংবা একটি মুখ্য লক্ষণের সঙ্গে দুটি গৌণ লক্ষণ নিশ্চিতভাবে মিলে গেলে বাতজ্বর নির্ণয় করা যায়। তার সঙ্গে বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত সংক্রমণের ইতিহাস বা প্রমাণও থাকতে হবে।
মুখ্য লক্ষণ
* হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ। যার ফলে জ্বর, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
* গিরায় ব্যথা হয়। সাধারণত শরীরের বড় বড় সন্ধিতে ব্যথা হয়। একটি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার পর অন্যটি আক্রান্ত হয়।
* বুকে ও পিঠে লাল বর্ণের চাকা।
* হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশের নিয়ন্ত্রণহীন কাঁপুনি।
* ত্বকের নিচে শিমের বিচির মতো ছোট আকৃতির শক্ত ও ব্যথাযুক্ত দানা।
গৌণ লক্ষণ
* স্বল্পমাত্রার জ্বর।
* গিরায় গিরায় ব্যথা।
* রক্তের ইএসআর বেড়ে যাওয়া।
* এএসও টাইটার বৃদ্ধি।
বাত জ্বরের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে ও আক্রান্ত জয়েন্ট নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে অ্যাসপিরিন খুবই কার্যকর। প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি কর্টিকোস্টেরয়েড যেমন প্রেডনিসোলন ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন ফিনক্সিমিথাইলপেনিসিলিন, বেনজাথিন পেনিসিলিন ও ইরাইথ্রোমাইসিন প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।
(অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবেন)
বাতজ্বর ছোঁয়াচে রোগ নয়। বাতজ্বরের রোগীর সঙ্গে থাকলে, খেলে, ঘুমালে, এমনকি ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করলেও বাতজ্বর হওয়ার আশঙ্কা নেই। গর্ভাবস্থায় মায়ের থেকে গর্ভের শিশুর সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।
বি.দ্র. : বাত জ্বর ও বাতের ব্যথা, অনেকে এ দুটি গুলিয়ে ফেলে। কারণ হচ্ছে, বাত জ্বরে গিঁটে গিঁটে ব্যথা হয়। বাতের ব্যথায়ও এই অনুভূতিটাই হয়। কিন্তু দুটোর মধ্যে পার্থক্য হলো, বাত জ্বরের ক্ষেত্রে জয়েন্টটা ফুলে যাবে। বড় জয়েন্টগুলোকে আক্রান্ত করবে। এই ব্যথাটা নড়াচড়া করতে থাকবে। একটি জয়েন্টে ব্যথা হলো, সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাবে আরেকটি জয়েন্টে ব্যথা হচ্ছে। একে পলিআরথ্রাইটিস বলা হয়। এটি হলো বাত জ্বরের নির্দিষ্ট পয়েন্ট। বাত অনেক কারণ থাকে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বড় জয়েন্টগুলোকে সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত করে না। এটা কেবল ছোট ছোট জয়েন্টকে করে। মেকানিক্যাল আরথ্রাইটিস থাকতে পারে। অঙ্গবিন্যাসের জন্য হতে পারে। আবার গাউট একটি বিষয় রয়েছে, সেটিকেও কিন্তু সবাই বাত বলে থাকে। সেটাতে ইউরিক এসিড বাড়ে। ক্রিস্টাল জমে জয়েন্টের মধ্যে। রিউমাটিক ফিবার বা বাত জ্বর কোনো বাতের ব্যথা নয়।
ডা.মোঃ সাইফুল আলম
এম.ডি (মস্কো,রাশিয়া)
সমন্নয়কারী চিকিৎসক
নিউ গ্রিনসিটি হাসপাতাল, পাবনা।
Leave a Reply