1. [email protected] : দৈনিক বিজয়ের বানী : দৈনিক বিজয়ের বানী
  2. [email protected] : Hasan :
  3. [email protected] : dev : dev
মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কী করবেন? - dainikbijoyerbani.com
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১২ অপরাহ্ন
ad

মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কী করবেন?

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৬৩৯ Time View

মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কী করবেন?

মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যে কোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে তা বিস্তৃত আকার ধারণ করে। রক্তে সেরোটোনিন বা ফাইভ এইচটি-এর মাত্রা পরিবর্তিত হলে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে সেগুলো মাথাব্যথার প্রারম্ভে স্ফীত হয়ে ফুলে যায়। এ ছাড়া কারও কারও মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। “মাইগ্রেন” শব্দের উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ হেমিক্রানিয়া থেকে, যার অর্থ “মাথার একদিকে ব্যথা”। হেমি অর্থ “অর্ধেক”, এবং ক্রানিয়ন অর্থ “খুলি”। বর্তমানে বিশ্বে শতকরা প্রায় ১১ জন বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথা ব্যথায় ভোগেন। ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মাইগ্রেনজনিত মাথা ব্যথা বেশি হয়।মাইগ্রেনকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।যেমন : কমন, ক্লাসিক্যাল, অপথালমোপ্লেজিক, ব্যাসিলার আর্টারি, হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন ইত্যাদি।

মাইগ্রেন কি কি কারণে হতে পারে:
মাইগ্রেনের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে বংশগত।পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বংশ পরম্পরায় এই সমস্যা প্রবাহিত হতে পারে। তবে কয়েকটি অভ্যাস বা কারণ রয়েছে যা মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে থাকে।এই কারণগুলো সম্পর্কে আগে থেকে সতর্ক থাকতে পারলে মাইগ্রেন কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও লাঘব পাওয়া যায়।সাধারণত পুরুষের চেয়ে মহিলাদের বেশি হয়।পুরুষ ও মহিলাদের এই অনুপাত ১:৫। মহিলাদের মাসিকের সময় এই রোগটি বেশি দেখা দেয়।মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে ৩ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং এই সময়ে ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। মাসে কয়েকবার পর্যন্ত মাইগ্রেন অ্যাটাক হতে পারে। এবার সেসব অভ্যাস বা কারণ রয়েছে যা মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় সে সম্পর্কে জেনে নিয়ে যাক।
১) দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কারণ খালি পেটে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হয়, যা মাইগ্রেনের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
২)অতিরিক্ত মাত্রার মিষ্টি খাবার রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকে। তখন সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীরে অতিরিক্ত ইনসুলিনের ক্ষরণ হতে থাকে। এর ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা ফের নামতে শুরু করে। এই তারতম্যের ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়ে যায়।
৩)অতিরিক্ত রোদে দীর্ঘক্ষণ ঘোরাঘুরির ফলে অনেক সময় মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। তাছাড়াও অস্বাভাবিক গরম, অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা তাপমাত্রার তারতম্যে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে।
৪)অতিরিক্ত আওয়াজ বা হাই ভলিউমে গান শোনার কারণেও মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়।
৫)যারা নিয়মিত ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় (যেমন কফি) খেতে অভ্যস্ত তারা হঠাৎ করে সেই অভ্যাস ছেড়ে দিলে মাইগ্রেন মাথাচাড়া দিতে পারে। তবে আস্তে আস্তে ছাড়ার অভ্যাস করুন।
৬)যারা একটানা দীর্ঘক্ষণ অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করেন বা যাদের কাজের চাপে ঘুম ও খাওয়া-দাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকে না, তাদের মাইগ্রেনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

মাইগ্রেনের চিকিৎসা:
মাইগ্রেন নির্ণয় করার কোনও নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই। তাই এই রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি বুঝতে গেলে মাথা ব্যথার অন্যান্য কারণগুলি সম্বন্ধেও জেনে নিতে হবে। মাথা ব্যথার দুই ধরনের কারণ রয়েছে— প্রাইমারি হেডেক এবং সেকেন্ডারি হেডেক।
কোনও অসুখের বহির্প্রকাশ হিসেবে মাথা ব্যথা হলে সেকেন্ডারি হেডেক বলা হয়। যেমন— টিউমার, ব্রেন স্ট্রোক, জ্বর, মাথায় চোট, চোখের সমস্যা ইত্যাদি কারণে মাথা ব্যথা হয়। তাই মাথা ব্যথা নিয়ে কোনও রোগী আসলে বুঝে নিতে হয় যে রোগীর কোনও সেকেন্ডারি হেডেক রয়েছে কি না। সেকেন্ডারি হেডেক খুঁজে না পেলে প্রাইমারি হেডেকের কথা ভাবতে হয়।
মাথা ব্যথাটা নিজেই যখন অসুখ তখন তাকে প্রাইমারি হেডেক বলে। এক্ষেত্রে প্রচুর পরীক্ষানিরীক্ষা করার পরও রোগীর মস্তিষ্কের মধ্যে কোনও গঠনগত সমস্যা দেখা যায় না। অর্থাৎ মাথা ব্যথার নেপথ্যে কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। মাথা ব্যথা হচ্ছে, এটাই হল সমস্যা। প্রাইমারি হেডেক আবার তিন ধরনের হয়— টেনশন হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক এবং মাইগ্রেন হেডেক।
দুশ্চিন্তা, অবসাদ দেখা দিলে মূলত টেনশন হেডেক হয়। মাথা ধরে থাকা, মাথার উপর ভারী বোঝা চাপানোর মতো অনুভূতি হয়। অবশ্য টেনশন হেডেক নিয়েই মানুষ নিজের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
মাথার একদিকেই বারেবারে ব্যথা হচ্ছে, চোখে যন্ত্রণা হয়, চোখ থেকে জল পড়ে, নাক বুজে যায়— এই লক্ষণগুলি হল ক্লাস্টার হেডেকের লক্ষণ।
রোগীর মধ্যে টেনশন হেডেক বা ক্লাস্টার হেডেকের উপসর্গ না দেখতে পেলে মাইগ্রেনের কথা চিন্তা করা হয়। পাশাপাশি মাইগ্রেনের নিজস্ব রোগ লক্ষণের মানদণ্ড মিলিয়ে নিতেও হয়। তারপরই বলা যায় মানুষটির মাইগ্রেন হয়েছে। অর্থাৎ রোগীর মাইগ্রেন হয়েছে নির্ণয় করতে হলে আগে নিশ্চিত হতে হয় যে রোগীর অন্য কোনও কারণে মাথা ব্যথা হচ্ছে না।

বেশি মাথাব্যথা কি়ংবা বারবার মাথাব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাইগ্রেন চিকিৎসায় দুটো ধাপ রয়েছে- একটি এবোরটিব এবং অন্যটি প্রিভেনটিব।যাদের বার বার ব্যথা হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় তাদের জন্য প্রিভেনটিব চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। মাইগ্রেন একধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।

কিছু খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
১)ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
২)বিভিন্ন ফল বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
৩)সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
৪)ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
৫)আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

মাইগ্রেনে প্রতিরোধে করনীয় :
মাইগ্রেন প্রতিরোধে ঘুম পর্যাপ্ত হতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। অহেতুক রাত জাগবেন না। অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা। কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে। উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা। বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা। মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত। রাতের খাবার ঘুমানোর ২-৩ ঘণ্টা আগে সেরে ফেলুন। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলুন। কোনো বেলার খাবার মিস করবেন না।ঘুমানোর আগে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলুন।অ্যালকোহল, সিগারেট, পনির ও চকোলেট পরিহার করুন।

লেখক: ডা. মোঃ সাইফুল আলম। এম.ডি. (রুদেন ইউনিভার্সিটি) মস্কো,রাশিয়া।

ad

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
ad
ad
© All rights reserved 2022
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সীমান্ত আইটি