মোঃ মেহেদী হাসান নিরব (আমতলী বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের ৩৮তম জন্মদিন শনিবার। এ তরুণ নেতা ১৯৮৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তার পৈতৃক নিবাস বরগুনা পৌরসভার আমতলাপাড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর একমাত্র ছেলে।
তবে রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন আর্ত মানবতার কল্যাণে বরগুনার অসহায় মানুষদের পাশে নিঃস্বার্থভাবে সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। আর এ জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুনাম দেবনাথ ব্লাড ফাউন্ডেশন। নাম ব্লাড ফাউন্ডেশন হলেও তিনি এ ফাউন্ডেশনকে বহুমুখী কাজে ব্যবহার করেছেন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। ২০১৪ সালের ১৭ই জুন রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে এ সংগঠনটির যাত্রা শুরু হলেও বিগত দিনগুলিতে সংগঠনটি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বানভাসি মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, অসহায়দের ঈদবস্ত্র প্রদান, রমজান মাসে ইফতার মাহফিল ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান, অস্বচ্ছলদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ, ফ্রি ব্লাড গ্রুপ ক্যাম্পেইন ও স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্ধুদ্ধকরণ বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালার আয়োজন করে। তদুপরি, মহামারি করোনাভাইরাসের একেবারে শুরু থেকে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমেও নিজেদের জোরালোভাবে যুক্ত করে এ ফাউন্ডেশনটি।
এ প্রসঙ্গে জানা যায়, বরগুনায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষদের সচেতনতায় সর্বপ্রথম মাঠে নামেন জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত সুনাম দেবনাথ ব্লাড ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় প্রথমে পৌরসভার প্রতিটি নলকূপের সামনে সাবান ও টিস্যু বেঁধে রেখে এ কার্যক্রমের সূচনা করেন। এরপর শুরু করেন প্রতিটি ইউনিয়নে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং কার্যক্রম। পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করেন বরগুনার সর্বস্তরের জনগণের মাঝে। পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর তিনি জেলার কর্মহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি সাধারণ চিকিৎসাসেবার পথ সুগম করতে নিজ উদ্যোগে ফ্রি টেলি মেডিকেল সার্ভিসও চালু করেছিলেন, চালু করেছিলেন ফ্রি সবজি দোকানও।
তার প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি এ পর্যন্ত বরগুনা এবং আশেপাশের এলাকায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে রক্তদান এবং রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে সাহায্য করেছে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে যুবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি বরগুনার ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে লালমনিরহাটে ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার্ত ১ হাজার পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল, ২ কেজি করে ডাল এবং চিড়া, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট বিতরণ করে দেশব্যাপী আলোচনায় চলে আসে। ২০১৮ সালে বরগুনার মাঝেরচর, গুলিশাখালী, বালিয়াতলীসহ পায়রা ও বিষখালী নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসরত ১৫০০ অসহায় পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।
২০১৯ সালের আগস্টে গুজব অপপ্রচার রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে তারা কয়েক’শ রোগীর ডেঙ্গুজ্বর নির্ণয়ে বিনামূল্যে বিভিন্ন পরীক্ষা করার পাশাপাশি ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সবরকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়। দুরারোধ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মিরাঙ্কা, হুজাইফা, রাবেয়াসহ এ পর্যন্ত প্রায় দু’শতাধিক অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবার সম্পূর্ণ খরচও সুনাম দেবনাথ প্রতিষ্ঠিত এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বহন করা হয়।
বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাগ্য বিড়ম্বিত দম্পতি জালাল হোসেন মুসুল্লী এবং খাদিজা আক্তারের স্বপ্ন ছিলো একটি মুদি দোকান আর একটি দুধেল গাই। তাদের সহযোগিতার নামে বরগুনার কিছু অসাধু লোক যখন হরিলুটে নেমেছিলো তখন সেই দম্পতির পাশে দাঁড়ায় সুনাম দেবনাথ ব্লাড ফাউন্ডেশন। বন্ধ হয়ে যায় সব রকম অপতৎপরতা। ২০১৮ সালের মে মাসে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ দম্পতিকে কিনে দেয়া হয় একটি দুধেল গাই। করা হয় আর্থিক সহযোগিতা। তাছাড়া দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে ঢাকা থেকে জেলা পরিষদের মাস্ক বানিয়ে বরগুনায় ফিরতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত জামাল হোসেনের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্বই শুধু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সুনাম দেবনাথ নেন নি একইসাথে তিনি করোনার প্রাদুর্ভাব না কমা পর্যন্ত তার পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বও নিয়েছিলেন।
এসবের পাশাপাশি জেলার শিক্ষার প্রসারেও নীরবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে ফাউন্ডেশনটি। এ প্রসঙ্গে জানা যায়, জেলার যে যেসকল মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই তাদের পাশেও সাধ্যমতো দাঁড়িয়েছে সুনাম দেবনাথ প্রতিষ্ঠিত এ ফাউন্ডেশনটি। বরগুনার পৌর এলাকার নোমান, রাসেল, শুভসহ শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশুনার খরচ নির্বাহ করা হচ্ছে এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। এছাড়া বরগুনার আশ্রায়ন প্রকল্পগুলিতে নিয়মিত ফ্রি শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয় সুনাম দেবনাথের প্রতিষ্ঠিত এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।
Leave a Reply