হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধি:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যঘোষিত ফলাফলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় অবস্থিত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এবারের অনার্স পরীক্ষায় ১০৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই প্রথম শ্রেণি লাভ করেছে।উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলেও ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যণন্ত কুমিল্লা বোর্ডে টপ টেনে থাকা সেরা কলেজ এটি।ওই এলাকার সংসদ সদস্য ও প্রতিষ্ঠানটির সাথে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য থেকে ওঠে আসা এমন ঈর্ষণীয় ফলাফলের নেপথ্য কাহিনী তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
কুমিল্লা-৫ এর স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান মুঠোফোনে এই বাপসনিউজকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার মফস্বলের একটি কলেজ থেকে এমন চমৎকার ফলাফলে আমি আনন্দিত। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নিউইয়র্কে বসবাসরত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী, প্রিন্সিপাল আলতাফ হোসেন, কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আমি অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই। তাদের সাফল্যের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, আমি এমনটাই আশা করি। এই কলেজের উন্নয়নে যখন যা করা দরকার, তিনি তা করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান।
সমাজকর্ম বিভাগ থেকে ৩.৬০ পাওয়া আসিমা আক্তার এই বাপসনিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির আগে কলেজে নিয়মিত আমাদের ক্লাস হয়েছে, ইনকোর্স পরীক্ষা হয়েছে।আমরা নিয়মিত ক্লাস করেছি।তিনি বলেন, ভাইভার প্রস্তুতির জন্য অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। তবে আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতার নজরদারি চোখে পড়ার মত। সমাজকর্মের আরেক শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার জানান, আমার বাবা নেই। তাই আমার কাছ থেকে বেতন কম নেয়া হয়েছে।না হলে হয়তো আমি লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়তাম।সমাজকর্ম বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণি পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম নাহিদ এই বাপসনিউজকে জানান, প্রতিষ্ঠাতার সঠিক দিকনির্দেশনা ও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি তার সহায়তা আমাদের সাফল্যের নেপথ্যে অনেক কাজ করেছে।সাথে ছিল প্রিন্সিপাল স্যার, বিভাগীয় প্রধান শরীফ রেজা স্যারসহ শিক্ষকগণের অদম্য চেষ্টা।রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান লিটন এই বাপসনিউজকে বলেন, এলাকার মানুষকে উচ্চশিক্ষা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতার সঠিক দিক নির্দেশনা এই ফলাফলের নেপথ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। এমনকি ঈদের সময়ও তিনি পরিবার ও আত্মীয়দের সাথে কথা না বলে কথা বলেন কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে।কলেজের সাফল্যের পেছনে তার অব্যাহত লেগে থাকা আমাদেরকে অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে। কথা হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান, ইউসুফ ও সোহেলের সাথে। তারাও ভালো ফলাফলে খুব খুশি এবং শোনান একই গল্প।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বাপসনিউজকে জানালেন এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বিভাগীয় চেয়ারম্যান কাউছার হোসেনের অনুপ্রেরণামূলক কর্মকান্ড।কাউসার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর সঠিক দিকনির্দেশনা এবং প্রিন্সিপাল আলতাফ হোসেন স্যারের গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমাকে অনার্স শাখায় সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেয়ায় প্রতিটি বিষয়ে আমি শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নিয়েছি বলে আমাকে তারা বেশি দেখেছে এবং আমার নাম বলেছে। আমাদের সকল শিক্ষকই মূলতঃ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, টিমওয়ার্কই মূলতঃ ভালো ফলাফলের কারণ। তিনি উল্লেখ করেন একারণে উচ্চ মাধ্যমিকেও শতভাগ পাসের রেকর্ড রয়েছে আমাদের। ইশরাত জাহান আরও বলেন, শহীদ স্যার, মামুন স্যার, হুমায়ুন স্যার, রাশেদ স্যার, নাসরিন মেম, আয়েশা নূর মেম, লিটন স্যার, জামাল স্যার, সুমন স্যারসহ সকল স্যারের প্রতি এই ভালো ফলাফলের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।প্রতিষ্ঠাতা নিজে ছাত্রছাত্রীদের সাথে শিক্ষাসফরে যান এবং তার জীবনের সাফল্যের গল্পগুলো বলেন, যা আমাদের জন্য ছিল যথেষ্ট অনুপ্রেরণাদায়ক।বিশেষ করে তিনি আমেরিকায় টেক্সি চালিয়ে এমন ৬টি প্রতিষ্ঠান করেছেন, এটা কম সাফল্য নয়।
কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৩.৩০ পেয়েছেন রাবেয়া আক্তার জেনি। তিনি বাপসনিউজকে জানান, আমি সবকিছুর জন্য প্রথমে মহান আল্লাহকে শুকরিয়া জানাই। আমাদের বাবা-মা এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতাপূর্ণ সহায়তার জন্য এমন ফলাফল এসেছে।একই বিভাগের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রবাসী সমাজ সেবক মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর অবদানের কথা তুলে ধরেন এই বাপসনিউজ-এর নিকট। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসিতা না করে তিনি তার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের কলেজসহ আরও ৬টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এজন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।এবারের পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৩.৫০ পাওয়া মোহাম্মদ আরমানও প্রতিষ্ঠাতার কঠোর নজরদারি ও আন্তরিকতার কথা তুলে ধরলেন এই বাপসনিউজ-এর নিকট।তিনি বলেন, গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের যেভাবে তিনি সাপোর্ট দেন, সেটা সত্যিই অনন্য। আমি বুড়িচং উপজেলা থেকে গিয়ে ওই কলেজে ভর্তি হয়েছি।আমি দেখেছি, কলেজের যে কোনো বিষয়ে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল আলতাফ হোসেনও এই বাপসনিউজকে বলেন, আমাদের নিয়মিত ৯২ জন এবং মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী ১১ জনসহ মোট ১০৩ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি পেয়েছে।কলেজটির এমন ফলাফলের নেপথ্য কারিগর হলেন প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী। আর তার সঠিক দিকনির্দেশনার কথা বলতেই হবে।তার এই ত্যাগের জন্য তিনি সমাজসেবায় একুশে পদক পাওয়া উচিত বলে মনে করি আমি।এছাড়া সহযোগিতার জন্য কমিটি, শিক্ষকমন্ডলী, এলাকাবাসীকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ করা, যথাসময়ে ইনকোর্স পরীক্ষা গ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর ছিলাম এবং আছি।শিক্ষার্থীরাও মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে এ সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে।
এমন বিরল সাফল্যের পেছনে নেপথ্য কারিগর, এলাকায় আলোর ফেরিওয়ালাখ্যাত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আবদুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বাপসনিউজকে মুঠোফোনে বলেন, পারিবারিক সূত্রে আমি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছি। আমার বাবা আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী রাঙামাটিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন।আমার বাবা বুড়িচং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাষাসৈনিক আবদুর রাজ্জাক মাস্টারসহ আরও অনেকে গুণী শিক্ষকের সাথে শিক্ষকতা করেছেন।বাবার অনুপ্রেরণাতেই আমি প্রতিষ্ঠানগুলো করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এবং অধ্যাপক মো. ইউনূসের কাছে ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছি, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজ তারা পৃথিবীতে নেই। মহান আল্লাহ যেন তাদেরকে জান্নাতবাসী করেন। নতুন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খানকে এমন একটি বিরল ফলাফল উপহার দিতে পেরেছি বলে আমি ধন্য।তাকেও ধন্যবাদ জানাই।তিনি কলেজের যে কোনো ব্যাপারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন শুনে আমি আনন্দিত। তবে সবাই আমার কথা বললেও আমি বলব শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কথা, যে ফলাফলের জন্য তারা সত্যিই অনেক পরিশ্রম করেছেন।
Leave a Reply