বদরুল হাসান – জৈন্তাপুর প্রতিনিধি
নদীর সাথে তাদের যেন রক্তের টান। এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে ভেসে বেড়ান তারা। এক নদী থেকে আরেক নদীতে ঘুরে বেড়ানোই যেন তাদের নিয়তি। পাশাপাশি টেঁটা দিয়ে মাছ শিকার, সিঙ্গা, তাবিজ, কবজ, সাপ ধরা, সাপের খেলা দেখানো, ছাতা- পুরনো তালা মেরামত, হারিয়ে যাওয়া জীনিষ খুঁেজ বের করা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর চিরায়ত চরিত্র অনেকটা বদলে গেছে, একইসাথে বদলে গেছে নদীনির্ভর মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি। কিন্তু সারি নদীর তীরের বেদেরা নিজেদের পূর্বপুরুষের পেশা কোনভাবেই ছাড়তে রাজি নয়। তাই নদীর মোহনার ফাঁকা মাঠে ছঁই বা ঝুপড়ি বা মাচা তুলে স্ত্রী-সন্তান-পরিজন নিয়ে দিন-রাত কাটান। বাংলার যাযাবর সে বেদেদের জীবন মানের উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।
সারি নদীর তীরে বসবাসরত বেদেদের নিয়ে এক ইফতার আয়োজনে বক্তারা একাথা বলেন। পরিবেশবাদী সংগঠন ’সারি নদী বাঁচাও আন্দোলন’ ও প্রবাসী কমিউনিটি নেতা, বিশিষ্ট দানশীল ব্যক্তিত্ব রোটারিয়ান আব্দুল গাফফার চৌধুরী আর্থিক সহযোগীতায় বৃহস্পতিবার সারীঘাটে অনুষ্ঠিত এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শতাধিক বেদের পাশাপাশি স্থানীয় নৌকা শ্রমিক ও মালিক, বালু শ্রমিক ও নদী তীরবর্তি অসহায়-দু;স্থ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ইফতার পূর্ববর্তী সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আব্দুল হাই আল-হাদীর সভাপতিত্বে ও মাহবুব উল আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক, নাজমুল আলম রুমেন, । অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, বেদে সর্দার সহ দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার জৈন্তাপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক হাসান মোহাম্মদ বদরুল, দৈনিক আলোকিত সিলেটের ফটো সাংবাদিক হোসেন মিয়া, সাংবাদিক সোহেল আহমদ, দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, বেদেরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদেরকে বাদ দিয়ে কিংবা পিছিয়ে রেখে উন্নত সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। প্রবাসে থেকেও আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বেদেদের জন্য যেভাবে চিন্তা করেছেন, যা করেছেন, তা সত্যিই এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা বেদেদের প্রতি সমাজের গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভাঙতে সাহায্য করবে। একইসাথে বাংলাদেশের নদ-নদীর সংরক্ষণেও সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য বক্তারা সবার প্রতি আহবান জানান।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে বেদেরা সে আবহমান কাল থেকে আছেন, সবার কাছে তারা অতি পরিচিত। নিজেদের পেশার মাধ্যমে তারা নিজেদের উপার্জন করছেন, একইসাথে সমাজেও তাদের অবদান মোটেও উপেক্ষার নয়। কিন্তু তাদের সে পেশার স্বীকৃতি কোন কালেই দেওয়া হয়নি। উল্টো তাদেরকে বরাবরই সহ্য করতে হয় সামাজিক গঞ্জনা আর অপমান।তাদের পেশাকে দেখা হয় ঘৃণার চোখে। এমনকি কী মুসলমান হিসেবে বৃহত্তর মুসলিম সমাজ থেকেও তারা কখনো ইসলামের মহান সাম্যের আচরণ পায়নি। সে চির উপেক্ষিত, নিগৃহিত বেদেদের জন্য এবারের রমজানে ব্যতিক্রমী ইফতারে এগিয়ে আসেন প্রবাসী কমিউনিটি নেতা যিনি নিজের কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে বেদেদের ইফতারের মাধ্যমে সম্মানিত করেন ।
Leave a Reply