হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ৪ খাবার
এম এস রেজা।
চট্টগ্রাম
হার্টকে সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাসে বেশ কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। এতে করে হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে সুরক্ষা রাখা যাবে নিজেকে। বিজ্ঞানীরাও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। ব্রিটেনে পুষ্টি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বয়স কম হওয়ার পরও এ দুটো কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটেনে অকাল মৃত্যুর অন্তত চার ভাগের এক ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগের জন্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য গবেষকরা।
পুষ্টি ফাউন্ডেশনের এক গবেষণার প্রতিবেদন বলছে, মানবদেহের খুবই ক্ষুদ্র অণুজীব মাইক্রোবায়োম সুস্থ থাকলে, কোমরের আকার যদি খুব বেশি বৃদ্ধি না পায় এবং সেই সঙ্গে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্র কম রাখা গেলে হৃদরোগ ঠেকানো সম্ভব। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছুটা পরিবর্তন আনলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে খাদ্য তালিকার পরিবর্তনটা কেমন হবে?
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া : প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার খেলে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। যা কিনা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, কলাই ও ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল। এছাড়া আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না খাবার খাওয়ার কথাও বলে থাকেন পুষ্টি বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি হোলগ্রেইন আটার রুটি এবং বাদামী চাল খাওয়ার জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন।
জমাট বাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার এড়ানো : খাদ্য বিজ্ঞানীদের মতে, যেসব খাবারে চর্বি থাকে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এসব খাবার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। এজন্য চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এ খাবার গুলোয় জমাট বাঁধা চর্বি প্রচুর থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, হৃদরোগ প্রতিরোধ করার জন্য চর্বি জমাট বাঁধে না এমন খাবার খেতে হবে। যেমন তেল সমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও বীজ। পাশাপাশি রান্নার ক্ষেত্রে অলিভ, রেপসিড, সানফ্লাওয়ার, কর্ণ এবং ওয়ালনাট তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। দুধের ক্ষেত্রে দুধ থেকে চর্বি সরিয়ে তারপর খান। এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, খাবারে যেন বাইরে থেকে মেশানো চিনি না থাকে। লাল মাংস না খেয়ে মুরগির মাংস খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুরগির চামড়া ফেলে দিতে হবে। গরুর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে মাংস থেকে চর্বি ফেলে রান্না করতে হবে।
লবণ না খাওয়া : অতিরিক্ত লবণ শরীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। এতে করে মানবদেহের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, লবণ কম-বেশি খাওয়া মানুষের অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। লবণ কম খেলে চাহিদাও কমে যাবে। এই অভ্যাস বদলাতে মানুষের মাত্র চার সপ্তাহের মতো সময়ের প্রয়োজন। লবণের পরিবর্তে রান্নায় মশলা ব্যবহার করলে এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া : আমাদের সুস্থ রাখতে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থযুক্ত খাবার সহায়ক ভূমিকা রাখে। কেবল মাত্র তাই নয়, এসব খাবারে হৃদরোগের সমস্যা কমে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ খাদ্য কার্যকরী। এসব খাবারে হার্টে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকেন, কেবল মাত্র স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের দ্বারাই হার্টের জন্য ইতিবাচক ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া যেতে পারে।
কারো শরীরে যদি ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি থাকে এক্ষেত্রে পাঁচটি ফল বা সবজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ছোট্ট এক গ্লাস জুস, শিম ও ডাল জাতীয় খাবার। এছাড়াও বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারও অনেক সহায়ক। কেননা, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে ভিটামিন-ই থাকে। ভিটামিন-বি জাতীয় খাবারও খাওয়া যেতে পারে। যেমন- মাছ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকে হোলগ্রেইন। কলা, আলু এবং মাছে পটাশিয়াম থাকে। এসব খাবার নিয়মিত খেলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Leave a Reply