মোঃমাজহারুল ইসলাম মলি
গলাচিপা(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি
সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালীর গলাচিপা
উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের সুতাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী
দয়াময়ী মন্দির। সুতাবাড়িয়া নদীর তীরে স্থাপিত এ মন্দিরটির বয়স কারো হিসেবে দুশ
বছরের উপরে, আবার কারো হিসেবে প্রায় তিনশ বছর আগের মোঘল আমলের। সনাতন
ধর্ম দর্শনার্থী-পূণ্যাথর্দের বিশ্বাস ‘ঢাকাতে ঢাকেরশ্বরী ও চিকনিকান্দি
দয়াময়ী’ মন্দির দুটি সমসাময়িক সময়ের স্থাপনা। কারো কারো মতে এটা জাগ্রত
মন্দির। ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় প্রত্নতাত্ত্বিক
নিদর্শন হিসেবে ঠঁাই পেলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি । আগে
এখানে প্রতিনিয়ত ধমর্ী দর্শনাথর্ী-পূণ্যাথর্ীদের সমাগম থাকলেও এখন শুধু মাঘী
সপ্তমীর মেলায় দূর-দূরান্তের মানুষের সমাগম ঘটে। নদী ভাঙ্গন রোধ না করতে পারলে মন্দিরের
যে অংশটুকু আছে তাও কালক্রমে বিলীন হয়ে যাবে। এমন আশংকা মন্দির কমিটির
লোকসহ স্থানীয়দের।
সুতাবাড়িয়া গ্রামের নামেই নদীর নাম প্রতিষ্ঠিত। বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর শাখা এই
সুতাবাড়িয়া নদী। মোঘল আমলের সময় স্থাপিত হয় দয়াময়ী মন্দির। এটিই বৃহত্তর
পটুয়াখালী জেলার অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় তীর্থ স্থান । এক সময় এর ব্যাপক জৌলুস
ছিল। মন্দিরের প্রবেশ পথে ছিল উচু সিংহ দরজা। দয়াময়ীর মন্দিরের পাশাপাশি ছিল
সুউচ্চ চূড়ার শিব মন্দির। নাট মন্দিরের আয়তন ছিল বিশাল খেলার মাঠের মত। এখানে
সারাবছর নানা উৎসব হতো। মাঘ মাসে মাসব্যাপী বসতো মেলা। জমিদার বাড়ির
মহিলাদের বসার জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা। জমিদার বাড়ি ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে
নদীতে। সিংহ দরজাও করেছে গ্রাস। ভাঙ্গন এখন দয়াময়ী মন্দিরের গাঁঘেসে দাড়িয়েছে।
শিব মন্দির কিছুটা পাশে।
১৯১৫ সালে প্রকাশিত রোহিনী সেনের লেখা “বাকলা“ গ্রন্থ মতে, তখন ছিল নবাবী
আমল। তৎকালীন নবাব তার সৈন্য বাহিনীর অন্যতম তীরন্দাজ শ্রীরাম সেনের সাহসিকতায়
মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন অঞ্চলে (অত্রাঞ্চল তখন সুন্দরবনের আওতাভুক্ত ছিল) প্রচুর পরিমান জমি দান
করেন। শ্রীরাম সেনের নাতি রাজারাম সেন মজুমদার পারিবারিক গুরুদেব তর্গবাগীশ
মহাশয় ও অনুচরদের সাথে নিয়ে পিতৃ সম্পত্তি উদ্ধারে এ অঞ্চলে আসেন। গুরুদেবের
নির্দেশে চারদিকে প্রচীর বেষ্টিত দয়াময়ী মন্দির ও শিব মন্দির নির্মাণ (প্রতিষ্ঠা)
করেন। রাজারাম সেন মন্দিরের পুঁজার জন্য ৩৬৫ টাকা আয়ের ভূ-সম্পত্তি এবং গুরুদেবকে
একই পরিমান নিস্কন্টক হাওলা প্রদান করেন। এছাড়া দয়াময়ীর নামেও প্রচুর পরিমান জমি
দেবত্ত্যোর হিসেবে দান করেন। দেবী দয়াময়ীর নামে এখানে অনেক গল্পগাঁথা প্রচলিত
রয়েছে। দেবী দয়াময়ী বাড়িতে এসে শঁাখা পড়েছেন, রান্না করেছেন, রোগ ব্যাধীর
প্রশমন করেছেন;এমন নানা কিংবদন্তী কাহিনীর কারনে মন্দিরের মাহাত্ম্য চারদিকে
ছড়িয়ে পড়ে। এতে হিন্দুদেরও তীর্থস্থানে পরিনত হয়। সুদূর কোলকাতা থেকেও নদী পথে
লোকজন আসতো এখানে। মাঘী পূর্ণিমা উৎসবে পাঠা বলি হত অগনিত। যা এখনও
প্রবীণদের মুখে মুখে। অনেক গৃহবধূরা এখানে মেলায় এসে শাঁখা-সিঁদুর পড়েন এবং
সন্তানের প্রথম চুল এখানে এসে কাটান। সেই মন্দির ও মেলা এখন ধংশের মুখে।
Leave a Reply