সাইমুন হাওলাদার সোলায়মান
স্টাফ রিপোর্টরঃ
বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরঘুস গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় বরগুনার ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ফোরম্যান মো. জিয়াউর রহমানের ঘুষের টাকা গ্রহণের একটি ভিডিও কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায় ‘আগে ভাই মাল (টাকা) দিয়ে কথা বলেন’।ওই ভিডিও চিত্রটিতে জিয়াউর রহমানকে গুনে গুনে ঘুষের টাকা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে।পাশাপাশি পুকুর ও খাল খনন (আইপিসিপি) প্রকল্পের অধীনে ওই দপ্তরের কর্মকর্তাকে কত পার্সেন্ট ঘুষ দিতে হবে তাও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছে বুঝিয়ে বলেন। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে আরও বলেন, প্রকল্প পরিচালক বাবদ ২২ হাজার টাকা, নির্বাহী প্রকৌশলীকে দুই পার্সেন্ট অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা কেটে রাখেন। আর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর এবং হিসাব রক্ষক হাজি মো. মহিউদ্দিন মিজানের জন্য দুই পার্সেন্ট নির্ধারিত টাকা তাদের হাতে দিয়ে আসতে বলেন তিনি।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে বরগুনা সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান একটি প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি নিজেই ঠিকাদারদের কাছ থেকে জোর করে ঘুস আদায় করছেন।ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ,ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না বরগুনার এলজিইডি অফিসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী ঠিকাদার বলেন, ‘আমরা ঠিকাদাররা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ উন্নয়ন কর্মী। সরকারের সকল প্রকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে থাকি। দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, পকেটের টাকা খরচ করে সরকারের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করি। অথচ সেই কাজ বাস্তবায়নের পরে বিল তুলতে গিয়ে ঘাটে ঘাটে শতকরা ১৭ পার্সেন্ট টাকা আমাদের কড়াগন্ডায় ঘুসের পার্সেন্টিজ গুনতে হয়। যিনি হিসাব রক্ষক হাজি মহিউদ্দিন মিজানকে দুই পার্সেন্ট টাকা না দিলে বিলে স্বাক্ষর হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর আরেক ভুক্তভোগী ঠিকাদার বলেন, ‘কাজ পেতে হলে ঘুস দিতে হয়। ওয়ার্ক ওর্ডার পেতে ঘুস দিতে হয়। কাজ বাস্তবায়নের সময় তদারকি কর্মকর্তাকে ঘুস দিতে হয়। এরপর বিল পাওয়ার আগে হিসাব রক্ষকসহ অফিস সহকারী, উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী এমনকি প্রকল্প পরিচালকসহ ঘাটে ঘাটে লাখ লাখ টাকা ঘুস দিতে হচ্ছে।এসব কারণে ঠিকাদারি পেশা থেকে এখন সরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।’
জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘুস দুর্নীতির এমন চিত্র কোনভাবেই কাম্য নয়।সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস দুর্নীতির কারণেই আমাদের দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অচিরেই যাতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিম বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের স্থানীয় উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অগ্রণী ভুমিকা রাখে। এখানকার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৌরাত্মে শুধুমাত্র সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে না।এতে সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে এলজিইডি এর বরগুনা কার্যালয়ের ফোরম্যান মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আমি অসুস্থ। আমি ফরিদপুরে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। আমি শীঘ্রই অফিসে আসব। এসে এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব। তবে তিনি কবে অফিসে আসবেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শীঘ্রই আসব।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, আপনি কোনো ভিডিওর কথা বলছেন তা আমি অবগত নই। ভিডিওতে যে টাকা দেখানো হয়েছে ওই টাকা আমার ঈদের বেতন এবং বোনাসের টাকা। ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। রিয়াজ নামের একটি লোক আমার সঙ্গে শত্রুতা করে এই ষড়যন্ত্র করেছেন। জেলা অফিসের হিসাব রক্ষক হাজি মহিউদ্দিন মিজান বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি কোনো টাকা পয়সা নেই না।
বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসকে আরিফুল ইসলাম বলেন, টাকা গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এ বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেনি।
Leave a Reply