বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস ২০২১
পরিকল্পিতভাবে সাইকেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান…
হাকিকুল ইসলাম খোকন ,বাপসনিউজ,সিনিয়র প্রতিনিধি সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে সাইকেলের বিকল্প নেই। ২০১৪ সালের তথ্যানুযায়ী, রাজউক এলাকায় দৈনিক সংঘটিত ৩ কোটি ট্রিপের মধ্যে প্রায় ৬০০,০০০ ট্রিপ সংঘটিত হয় সাইকেলে। যানজট, জ্বালানি সংকট, জলবাযূর পরিবর্তন, শব্দ, বায়ু ও পরিবেশ দূষণসহ নানা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সাইকেলের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। এজন্য স্বল্প ও দূরবর্তী যাতায়াতের জন্য সাইকেলের রাস্তা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ একটি সমন্বিত সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাদি যেমন, নিরাপদ সাইকেল পার্কিং, মেরামতের ব্যবস্থা, ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, খাওয়ার পানি ও গণশৌচাগারের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। সাইকেল লেন এমন হতে হবে যেন মানুষ সহজে ও নিরাপদে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। আজ ৩ জুন ২০২১, সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট কর্তৃক বিশ^ বাইসাইকেল দিবস উপলক্ষে সাইকেল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলি, পরিবেশবান্ধব নগর গড়ি এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। খবর বাপসনিউজ।
উল্লেখ বাইসাইকেল ব্যবহারের উপযোগিতা এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে এর জনপ্রিয়তা জনসমাজে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ৩ জুন বিশ^ বাইসাইকেল দিবস পালন করা হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘ তার সাধারন সভায় ৩ জুন বিশ^ বাইসাইকেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
আলোচন সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এর নির্বাহী পরিচালক জনাব খন্দকার রাকিবুর রহমান। বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডিসাইক্লিস্টস এর ভলিন্টিয়ার ফুয়াদ আহসান চৌধুরী, প্রাণ আরএফএল গ্রুপ এর চীফ অপারেটিং অফিসার জয়নুল আবেদীন। বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের হেলাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান।
মোঃ আতিকুর রহমান তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, হাঁটার পরে সাইকেলই সবচেয়ে সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যম। একটি ৩.৫ মিটার প্রশস্ত একটি সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ঘন্টায় ২০০০ জন চলাচল করতে পারে। সেখানে সাইকেল চলতে পারে ১৪০০০। প্রতি কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ২৫০ গ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন রোধ করা সম্ভব। পৃথিবীর অনেক শহরে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলার অংশ হিসেবে শহরে সাইকেলে যাতায়াতের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা শহরে সাইকেলে যাতায়াত জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে সাইকেলের উপর কর হ্রাস করে সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষনে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, সাইকেল চালানোর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা শহরে সাইকেল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হলে সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক বিভাগ এবং ডিটিসিএ মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। বিচ্ছিন্নভাবে লেন তৈরি করে সাইকেলবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ঢাকা শহরের সকল মেগা প্রকল্পগুলোতে সাইকেলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ফুয়াদ আহসান চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরে সাইকেল চালানোর নিরাপদ পরিবেশ নেই। পার্কিংয়ের সুযোগ নেই। রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীদের সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করে তুলতে হবে। পরিকল্পিত সাইকেল নেটওর্য়াক গড়ে তোলার পাশাপাশি সাইকেলিস্টদের নিরাপত্তায় সড়কে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করা এবং সড়কের মোড়গুলোতে নিরাপদে বাঁক নেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, সাইকেল শুধু বাহনই নয়। এটি শিশুদের শারিরীক মানসিক মেধা বিকাশেও ভূমিকা রাখে। সাইকেলের কর হ্রাস এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্রদান করা হলে সকলের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে সাইকেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে। হেলাল আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরের আশপাশের জেলাসমূহের সাথে সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, স্বল্প ও দূরবর্তী যাতায়াতের জন্য সাইকেলের রাস্তা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ একটি সমন্বিত সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাদি যেমন, নিরাপদ সাইকেল পার্কিং, মেরামতের ব্যবস্থা, ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, খাওয়ার পানি ও গণশৌচাগারের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। সাইকেল লেন এমন হতে হবে যেন মানুষ সহজে ও নিরাপদে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির, ডাস এর নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল, সাফ এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক এবং রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুননেসা প্রমুখ।
Leave a Reply