মোঃ লিমন গাজী
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি
বরগুনার তালতলীতে শশুর বাড়ির ঘরের আড়া থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ইব্রাহিম খলিফা (২১) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলার ৫ নং বড়বগী ইউপির ছোট ভাইজোড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই যুবক উপজেলার ৬ নং নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের মৌরভী এলাকার বাদশা খলিফার ছেলে।
নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, আজ থেকে প্রায় ২ বছর পুর্বে তালতলীর ছোট ভাইজোড়া এলাকার দেলোয়ার হাওলাদারের মেয়ে লামিয়ার (২০) সাথে ইব্রাহিম খলিফার বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস না পেরোতেই তাদের সংসারে দাম্পত্য কলহ শুরু হতে থাকে।
এর মধ্যে গত বছর অক্টোবর মাসে লামিয়া গর্ভবতী হয় এবং একটি ছেলে সন্তান জন্মায়। সেসময় লামিয়া তার বাবার বাড়ি চলে আসেন। সন্তানের জন্মের পরে সন্তানসহ স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বড়িতে ফেরত নিতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরের শিকার হয়ে থাকেন ইব্রাহিম খলিফা।
শ্বশুরবাড়ি থেকে লাঞ্ছিত হয়ে রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য নোয়াখালীতে চলে যায় তিনি। নোয়াখালী থেকে ইব্রাহিম তার স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে স্ত্রী লামিয়া জানায় তালতলীতে বাসা ভাড়া রেখে যদি বসবাস করে তবে সে স্বামীর সাথে থাকবে। অন্যথায় লামিয়া তার শ্বশুর বাড়িতে যাবে না।
এ ঘটনার ৮ থেকে ১০ দিন আগে ইব্রাহিম নোয়াখালী থেকে এসে তালতলী সদরে একটি বাসা ভাড়া রাখে এবং গত (২৪ জানুয়ারি) সোমবার লামিয়াকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসতে যায়। সেখানে ইব্রাহিমের সাথে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের তর্কাতর্কি হয়ে থাকে।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) ভোররাতে তালতলী থানা পুলিশ যুবকের আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ইব্রাহিম খলিফার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ইব্রাহিম খলিফার শশুর দেলোয়ার হাওলাদার জানায়, সোমবার সারা দিন আমার বাড়ির কাজ করেছিলেন ইব্রাহিম। সন্ধ্যার দিকে আমি জয়ালভাঙ্গা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাই। রাতে ডিউটি শেষে বাড়িতে এসে ইব্রাহিমের গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখতে পাই। এর বেশি কিছু আমি জানিনা।
নিহত ইব্রাহিমের বাবা বাদশা খলিফা জানায়, আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার ৪ মাস আগে, সে তার স্ত্রীকে আনতে শ্বশুর বাড়িতে গেলে তার শশুর বাড়ির লোকজনের হাতে মারধরের শিকার হয় তিনি। পরবর্তীতে আমার ছেলে অভিমান করে এলাকা ছেরে কাজের উদ্দেশ্যে নোয়াখালী চলে যায়।
এছাড়াও আমার ছেলের লাশ যখন উদ্ধার করেছে তখন তার পায়ে জুতো এবং মাটিতে দাড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে একাধিক সাক্ষ্য রয়েছে। তার চোখে ও কপালে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমার মনে হয় এটা পরিকল্পিত হত্যা। আমি এই হত্যার বিচার চাই। পোসমাডাম রিপোর্ট পেলে হত্যা মামলা দায়ের করব আমি।
এবিষয়ে তালতলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply