আতিকুর রহমান গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
জীবন্ত একজন মানুষকে পোঁকা কামরে কামরে খাচ্ছে!
রক্ত, পোঁজসহ পায়ের মাংস গলে গলে পড়ছে, দুর্গন্ধে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই পাশে। ভয়াবহ দুর্বিষহ মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে আব্দুল মজিদ ,পাশেই স্ত্রী পায়ের শত শত পোকা বের করে একটু বেঁচে থাকার সাহস যোগাচ্ছে। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের ছাপরা মসজিদের পাশেই ছোট্ট একটি টিনের ঘরে বসবাস আব্দুল মজিদের।
এমন তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে গাজীপুরের মানবিক মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেন বাদশা আব্দুল মজিদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন আব্দুল মজিদের এমন ভয়াবহ সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে ব্যথিত হন।
শ্রীপুরে অল্প জমি কিনেছিলো মজিদ মিয়া তাও আবার ১৫ বছর হলো। দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে একটি টিনের ছাপড়া দিয়ে সন্তান সন্ততি নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। কোনাবাড়ি তোশকা ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গেলো তার পর তারপর থেকেই এই অবস্থা। ঘরের বিতর প্রচন্ড উত্তাপ তাই প্রায়ই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উঠোনের পাশেই ইট সলিং করা রাস্তায় পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকে।
৮ই অক্টোবর ২০২১ইং রোজ শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ বাগমারা ছাপড়া মসজিদ এলাকায় ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে তার বাড়িতে যান। পরে বৃদ্ধ মজিদের এমন অবস্থা দেখে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাৎক্ষণিক মানবিক মানুষ আকরাম হোসেন বাদশা গাজীপুর তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করেন এবং নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। আব্দুল মজিদ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার সকল দায়-দায়িত্বও নেন ।
এসময় চিকিৎসা ও পারিবারিক খরচের জন্য নগদ টাকার পাশাপাশি চিকিৎসা চলাকালে যাবতীয় ঔষধ পাওয়ার ব্যবস্থা করে যান এবং মজিদ মিয়ার দেখাশোনার জন্যও স্থানীয় দুইজন ব্যক্তিকে দ্বায়িত্ব দিয়ে যান।
স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, পনের বছর আগে এ গ্রামে একটু জমি কিনে একটি টিনের ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছেন মজিদ মিয়া। তাদের ছোট্ট ঘরে ৩মেয়ে ও ১ছেলে আছে।
স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, আব্দুল মজিদ মিয়া অনেকদিন পূর্বে একটি পোশাক কারখানায় লেবার হিসেবে কাজ করতেন। এর পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিছু দিন যেতেই হাতে পায়ের চামড়া উঠতে শুরু করে। পরে বিভিন্ন ওষুধ খেলেও কোনো উপকারে আসেনি। কিছু দিন পর পায়ে বড় বড় ঘাঁ দেখা দেয়। আর কিছু দিন যেতেই পচন ধরে সে পায়ে পোকা ধরে ফেলে। এখন পচন আর পোকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এখন এক বেলা ওষুধ খাওয়ার সামর্থ্য নেই। নিদারুন কষ্টে জীবনযাপন করছে তাঁরা। ছোট ছেলের পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে তিন হাজার টাকা বেতনে না পাড়ছে চিকিৎসা চালাতে না পাড়ছে সংসার টানতে! কখনো কখনো না খেয়েই তাদের দিন কাটে।
অসুস্থ আবদুল মজিদ জানান, কোনাবাড়িতে একটি পোশাক কারখানার জিন্সের প্যান্ট তৈরির কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে কাজ করতেন। পরে অসুস্থতা দেখা দিলে তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিছু দিন যেতেই হাত পায়ে ঘাঁ দেখা দেয়। দিন দিন সে ঘাঁ বাড়তে থাকে। এক সময় পায়ের ঘাঁ বাড়তে বাড়তে পচন ধরে গেছে। তিনি জানান, একটি ছেলে তিনটি মেয়ে তাঁর সংসারে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তবে তাঁদের কোনো যত্ন খোঁজ খবর নেয়না। ছেলেটি ছোট্ট। অন্যের দোকানে ৩ হাজার টাকায় চাকরি করে। তিনি কথা বলতে বলতে কান্না শুরু করে দেন। তিনি আতর্নাদ করে বলেন “বাবাগো আমার পাওডা কাইট্টা দেইন।বিষের যন্ত্রনায় বেচে থাকবে বড় কষ্ট হচ্ছে! এমন সময় তিনি চিকিৎসার কথা শুনতে পায় কেও একজন তার চিকিৎসা করাচ্ছে। নিমিষেই চোখ দুটো ছলছল হয়ে যায় পানিতে। মানব প্রেমিক মানবতাকে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে মানুষের কাছে বিলিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন।
মজিদের স্ত্রী বেগম তারা বিবি বুক চাপা কান্না কন্ঠে বলেন একটি পুত হেরে স্কুলে দিছিলাম। কিন্তু টেহার অভাবে পড়া বন্ধ। মাইনসের দোহান(দোকান) কাম করে। তিনার ওষুধই কিন্তারি না বই খাতা কেমনে কিনাম ? এক সময় তিনি হাউমাউ কাঁদতে থাকেন। তিনি বলেন মেয়েরা স্বচ্ছল কিন্তু কোনও খুঁজ খবর ই রাখে না। সারা দিনে বহুবার পচন থেকে পোকা বের করতে হয়। দুর্গন্ধ আর অনটনেই কাটে আমাদের দিন।
তিনি আরও বলেন স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাই আকরাম হোসেন বাদশা ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ । ।
আকরাম হোসেন বাদশা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন আবদুল মজিদ বাস করেন গাজীপুর শ্রীপুরের ২ নং ওয়ার্ডের ছোট্ট টিনের ঘরে। এক সময় পোশাক কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে কাজ করতেন তিনি, অসুস্থ হলে সেই চাকরি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তার এই অসুস্থতা মারাত্মক রুপ ধারণ করে। পায়ে ধরে পচন, অসহনীয় ব্যথা-দুর্গন্ধ; উপরন্তু চরম মাত্রার অভাব অনটনের কারণে তার জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি এবং তার পরিবার কতটা কষ্টে প্রতিটি দিন অতিবাহিত করছেন
আজ দুপুরে আমি গিয়েছিলাম আবদুল মজিদের সাথে সাক্ষাৎ করতে। উপস্থিত ভাবে তাকে সাধ্যমত আর্থিক সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক থাকলে তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করব। আপনারা দোয়া করবেন যেনো তার চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
তিনি আরও বলেন মানুষ মানুষের জন্য এটার আমার কাছে চিরন্তন সত্য বাণী। একজনের বিপদে পরলে অন্যজনকে সহযোগিতা করবে এমনটাই হওয়া উচিত। এই বৃদ্ধ লোকটি আজ পা হারাতে বসেছে! কি নিদারুণ কষ্ট তার জীবন কাটাতে হচ্ছে তার। অনেকেই বিত্তবান আছেন যারা ইচ্ছে করলেই এই মানুষটির পাশে দাড়াতে পারেন। আপনাদের সহযোগিতায় পুরো একটি পরিবার হাসতে পারবে আবার নতুন করে।আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। যাতে এই ব্যক্তি চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে হাসতে পারে।
এসময় আকরাম হোসেন বাদশার সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট সাইদ চৌধুরী, প্রথম আলোর শ্রীপুর প্রতিনিধি সাদেক মৃধা ,সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার রাজিবুল হাসান,দেশ রূপান্তর প্রতিনিধি সোহাগ, দৈনিক তৃতীয় মাত্রার গাজীপুর বিশেষ প্রতিনিধি মহিদুল আলম চঞ্চল, জুনায়েদ রুবেল সহ আরও অনেকে
Leave a Reply