করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যে চসিকের প্রস্তুতি সভা
শেখ দিদারুল ইসলাম চৌধুরী
বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামে চলতি মাসের শেষে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেশে আসার কথা রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা আশাবাদী। এ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুয়োগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর পদক্ষেপের কারণে করোনাকালে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম।
রবিবার (৩ জানুয়ারি) সকালে নগরে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রশাসক সুজন বলেন, ১৮ বছর বয়সী কিশোররা করোনা ভ্যাকসিন পাবেন না এনিয়ে কিছু ভুঁইফোড় গণমাধ্যম যে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন সে ব্যাপারে দেশ ও নগরবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি গুজবে নগরবাসীকে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির সাধারণ তাপমাত্রায় করোনার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা যাবে বলে জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মী, সম্মুখ সারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধহীন ও ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
এখন পর্যন্ত করোনার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন শতভাগ নিরাপদ। পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান ভ্যাকসিন প্রদানে সাপ্লাই ও কোয়ালিটি ম্যানেজম্যান্ট নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমাদের দেখতে হবে চিকিৎসক, নার্স, ক্লিনারসহ সম্মুখ সারির কর্মীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাতে ভ্যাকসিন পায়।
তিনি সব ঝুঁকি নিয়েই এ ভ্যাকসিন কার্যক্রম দ্রুততর সময়ে শুরু করে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বণ্টনের আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে সে ভাবেই আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। জাতীয় কমিটির পরামর্শ মতে কার্যক্রম চলবে।
তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার কমিটিতে এনজিওসহ আরও তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সংযুক্ত করতে বলেন। ভ্যাকসিন বিতরণ প্রক্রিয়ায় চসিক এলাকার কমিটিকে সেন্ট্রাল বা প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি কমিটির সঙ্গে লিংক রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক ভ্যাকসিন প্রথমে কাদের দেওয়া হবে তার একটি গাইড লাইন সরকারিভাবে দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করেন। তিনি নকল ভ্যাকসিন উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতারণা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান, করোনার ভ্যাকসিন কারা পাবেন তার যৌক্তিক প্রাপ্যতার জন্য চারটি বিষয়ের ওপর জোর দেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- রেশন্যাল, ট্রান্সপারেন্সি অর্থ্যাৎ এনআইডি কার্ডের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান, সার্ভিস ডিজাইন অর্থাৎ ভ্যাকসিন কীভাবে দেওয়া, রাখা ও যথাস্থানে পৌঁছানো হবে এর কার্যক্রম ও এসিউরেন্স অর্থ্যাৎ ধারাবাহিকভাবে এই ভ্যাকসিন সবাই পাবেন তার নিশ্চয়তা দেওয়া। যাতে এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে কোনো ভুল বার্তা না যায়।
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ভ্যাকসিন প্রদান ও সংরক্ষণে করপোরেশনের সার্বিক প্রস্তুতি আছে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের মোট ৭টি স্টোর ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও ইপিআই কর্মী রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের আরও প্রশিক্ষিত করব।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও কোভিড ইউনিটের ফোকাল পারসন অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সাত্তার বলেন, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (হু) নির্দেশনা অনুসারে যেকোনো রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন) গণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার অধিকার রাখে। সেই মতে রাষ্ট্রের সিনিয়র সিটিজেন হলেন ৬০, ৬৫ বছর ঊর্ধ্বে নাগরিকরা। তিনি ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে বলেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং আ্যাস্ট্রোজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন বংলাদেশে সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশ সরকারকে ৩ (তিন) কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে।
Leave a Reply