গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুরের শ্রীপুরে আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা মাছুম হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। মাছুমের ঘর থেকে জমির কাগজপত্র চুরি করতে আসা ঘাতকদের একজনকে ধরে ফেললে ও চিনে ফেলায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ডিআইজি (পিবিআই) বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর দিক নির্দেশনায় গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার (পিবিআই) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সহযোগিতায় ২৭ জুলাই থেকে আলোচিত হত্যা মামলাটি ছায়া তদন্ত শুরু করেন পুলিশ পরিদর্শক (পিবিআই) মো.কাওছার উদ্দিন।
এঘটনায় ৪ জনকে পিবিআই ও ১ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদের চালা গ্রামের মৃত হাবিবুল্লাহর সন্তান আবুল কালাম (৪১) মো.শামসুদ্দিনের সন্তান সফিকুল ইসলাম (৩২) আ.জলিলের সন্তান নাজির হোসেন জয় (২৯), আব্দুর রশিদের সন্তান সাইফুল ইসলাম( ৪০) আজহারুল ইসলামের সন্তান হারুনুর রশিদ (৩৮)।
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সদ্য পাশ করা প্রকৌশলী সৈয়দ মাছুম আহম্মেদ (২৭) বেড়াইদেরচালা গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের সন্তান। সে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলো।
গ্রেফতারকৃত আবুল কালাম জানিয়েছেন, ইদের দিন দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটের সময় কালাম তার সহযোগীদের নিয়ে স্থানীয় একটি কারখানা থেকে ইলেকট্রনিক তার চুরি করতে যায়। কিন্তু কারখানার নিরাপত্তা কর্মী সজাগ থাকায় তারা তার চুরি করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় মারুফ ও জহিরদের সাথে জমিজমা সংক্রান্তে বিরোধের কারনে মারুফ ও জহিরদের নির্দেশে আসামী কালাম ও তার সহযোগীরা ঈদের দিন রাতে মাছুম বাড়িতে না থাকার সুযোগে তার রুমের তালা ভেঙ্গে বিবাদমান সম্পত্তির মূল কাগজপত্র চুরির পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামী কালাম তার সহযোগী আসামীদের নিয়ে রাত অনুমান ২.৪০/২.৫০ মিনিটের সময় মাছুমের বাড়ীতে প্রবেশ করে। বাড়ির অন্যান্য রুমের বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়ে মাসুম তার কক্ষে না থাকায় আসামীরা তালা ভেঙ্গে জমির কাগজপত্র চুরি করার উদ্দেশ্যে কক্ষে প্রবেশ করে।
রাত অনুমান ৩ টায় মাছুম তার বাড়িতে এসে কক্ষের সামনে গেলে ভিতর থেকে একজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে মাছুম তাকে ধরে ফেলে। তখন অন্যান্য আসামীরা ইট দিয়ে মাছুমের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। এসময় মাছুম চোর চোর বলে চিৎকার দিলে আসামীরা ভয়ে দৌড়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলে আসামীরা ব্যবহৃত ০৩ জোড়া সেন্ডেল ও ০২ টি ছাতা ফেলে রেখে যায়। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে অন্যান্য আসামীরাও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
এ বিষয়ে পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ঘটনার রাত অনুমান ৩ টায় মাছুম বাড়ীতে না থাকায় তার পরিবারের সাথে বিবাদমান জমির মূল কাগজপত্র চুরির উদ্দেশ্যে আসামীরা তালা ভেঙ্গে তার ঘরে প্রবেশ করে। মাছুম তার কক্ষে প্রবেশ করার সময় পূর্বে অবস্থান করা আসামীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে মাছুম একজনকে ধরে ফেলে।
এসময় আসামীদের সাথে মাছুমের ধস্তাধস্তি হয়। এসময় আসামিরা ইট দিয়ে মাছুমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথারী আঘাত করতে থাকে। মাছুম চোর চোর বলে চিৎকার দিলে আসামীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আসামীরা ব্যবহৃত ৩ জোড়া সেন্ডেল ও ২ টি ছাতা ফেলে রেখে যায়। মাছুমকে মুমূর্ষ অবস্থায় তার পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশংকাজনক দেখে ঢাকায় রেফার্ড করেন।
পরবর্তীতে ২৩ জুলাই সকালে আগারগাঁও ন্যাশনাল নিউরো সাইন্স অব ইন্সটিটিউঢে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মূলত জমির মূল কাগজপত্র চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে আসামীদেরকে চিনে ফেলায় মাছুমকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে।
আবুল কালামকে ৩১ জুলাই বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে সে নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িয়ে অন্যান্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে সেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এবং অন্যান্য আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে বলেও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান তিনি।
Leave a Reply