হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধি-
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ানোর ফলে ‘মানুষ হত্যা’ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ভ্যাকসিন ও মহামারি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ‘ফেসবুকের মত প্ল্যাটফর্ম’-এর ভূমিকা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সম্প্রতি ব্যাপক চাপের মধ্যে রেখেছে হোয়াইট হাউস। ফেসবুক অবশ্য বলেছে, তারা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ‘আগ্রাসী পদক্ষেপ’ নিচ্ছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘তারা মানুষ হত্যা করছে। যারা টিকা দেয়নি, শুধু তাদের মধ্যেই এখন মহামারি বিরাজমান।’
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে, দেশটিতে সম্প্রতি করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব দেখা গেছে শুধুমাত্র টিকা দেয়নি, এরকম মানুষের মধ্যে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, ফেসবুক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম গুজব মোকাবিলায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না। তিনি বলছেন, ‘অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এটাও পরিষ্কার যে আরও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।’
ফেসবুকের একজন মুখপাত্র কেভিন ম্যাকঅ্যালিস্টার মন্তব্য করেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান প্রমাণহীন অভিযোগের কারণে বিভ্রান্ত হবে না। এছাড়া আলাদা একটি বিবৃতিতে ফেসবুক জানিয়েছে, ‘আমরা কোভিড সংক্রান্ত ১ কোটি ৮০ লাখ ভুয়া তথ্য এবং ক্রমাগত নিয়ম ভেঙ্গেছে এমন বেশকিছু অ্যাকাউন্ট অপসারণ করেছি।’
কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফেসবুক সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে। তবে মহামারি নিয়ে ভুয়া কন্টেন্ট এখনও ব্যাপকভাবে দেখা যায় প্ল্যাটফর্মটিতে। মার্চে এক প্রতিবেদনে উঠে আসে যে ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে ভ্যাকসিন বিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের প্রায় ৬ কোটি ফলোয়ার রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছেন আর অন্তত ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি পুরোপুরি টিকা গ্রহণ করেছেন। তবে টিকা নেওয়ার জন্য যোগ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেকেই টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য, টিকার ওপর তাদের ভরসা নেই।
গত মার্চ মাসেই ফেসবুক, গুগল আর টুইটারের প্রধান নির্বাহী- মার্ক জাকারবার্গ, সুন্দর পিচাই ও জ্যাক ডরসিকে ভুয়া তথ্যের বিষয়ে কংগ্রেসে প্রশ্ন করা হয়। সিনেটরদের টুইটারের প্রধান নির্বাহী ডরসি বলেন, পোস্ট মডারেট করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ টুইটার। গুগলের প্রধান নির্বাহী পিচাই জানান, ইউটিউব বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট সরিয়ে নিতে কাজ করছে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন বিষয়ক তথ্য প্রচার করায় ভূমিকা রাখছে বলেও সেসময় জানান তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো গত নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের ছেলের বিব্রতকর ই-মেইল ফাঁসের সময় সেন্সর করার অভিযোগ স্বীকার করার পরই এমন অভিযোগ উঠল।
নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের রাজনৈতিক সহচররা কোনো প্রমাণ ছাড়া দাবি করেন যে, বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের লেনদেন নিয়ে নিউইয়র্ক পোস্টের করা প্রতিবেদনগুলো ‘গুজব’। টুইটার ও ফেসবুক সেসময় নিউইয়র্ক পোস্টের তৈরি করা প্রতিবেদনগুলোর লিংকগুলো ব্লক করে দেয়।
Leave a Reply