কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা
মিলন আকন (১৭)। বাবার নাম শাহ আলম আকন। জেলে মিলন বেরীবাধেঁর বাইরে বাবা মায়ের সাথে বসবাস
করতেন। ২০০৮ সালে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে মিলন, ফারুক (১২), খোকন (২৫)সহ ৩ জেলে নিখোঁজ
হন। তার বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনরা মিলনকে সমুদ্রসহ বিভিন্ন স্থানে খুঁজে বেড়ান। কিন্ত মিলনসহ
অপর জেলেদের আর পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজন ধরে নিয়ে ছিল মিলন হয়তো সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পরে
ট্রলার ডুবে মারা গেছে। জীবিত মিলনকে না পেলেও যদি তার লাশ পাওয়া যায় এই আশায় লাশের খোঁজ
করেন সমুদ্র উপকুলীয় এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু মিলনের লাশও পাওয়া যায়নি। হতাশ বাবা মা ছেলের
শোকে দীর্ঘদিন কান্না কাটি করে শোকের পাথর বুকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করে। ১৩ বছর পর
হঠাৎ করে গত মঙ্গলবার মিলনের এক আতœীয়’র মাধ্যমে বাবা মা জানতে পারেন পার্শ¦বর্তী জেলা বরগুনার
তালতলী এলাকায় মিলনকে ভারসাম্যহীন অবস্থায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে। এমন খবরে নিশ্চিত হবার জন্য
মিলনের ছবি তুলে পাঠাতে বলে মিলনের বাবা মা। তালতলী থেকে ছবি তুলে পাঠানো হয় পরিবারের কাছে।
ছবি দেখে চিহ্নিত করে মিলনকে তার বাবা মা। মিলনের বাবা মাসহ এলাকাবাসীর ধারনা ঝড়ের কবলে পরে
মিলনসহ তিন জেলে ভেসে গিয়ে ভারতে ওঠে। সেখানে মিলনকে ভারতের জেলে রাখে। পরে ইনজেকশন পুশ করে
ছেড়ে দেয়া হয়। এই ইনজেকশনের প্রভাবে মিলন ভারসাম্যহীন হয়ে পরে।
৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকালে ট্রলার নিয়ে তালতলী যান মা মিনারা বেগমসহ তার পরিবারের লোকজন।
তালতলী থেকে দুপুরে বাড়িতে নিয়ে আসে। বর্তমানে মিলনের বয়স ৩০ বছর। মুখে দাড়ি। ১৩ বছর পর
মিলনকে ফিরে পেয়ে বাবা মা সহ পরিবারের লোকজন আবেগে আপ্লুত হয়ে পরে। বর্তমানে মিলন অসুস্থ।
তার পরিবারের লোকজন সেবা করছেন তাকে সুস্থ করার জন্য। এদিকে মিলন ফিরে আসার খবরে শত শত নারী
পুরুষ ভীড় করে মিলনকে এক নজর দেখার জন্য।
মিলনের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, সমুদ্রে নিখোঁজ হওয়ার ৪ মাস আগে বিবাহ করে মিলন।
নববধু ৫ বছর স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে। পরে তার বাবা মা শশুর বাড়ি থেকে মেয়েকে নিজ
বাড়িতে নিয়ে বিবাহ দেন। মিলনের ফিরে আসার খবরে তার সেই স্ত্রী মিলনকে এক নজর দেখতে
কুয়াকাটায় ছুটে আসে।
মিলনের বাবা শাহ আলম আকন বলেন, আমার ছেলে মিলন ২০০৮ সালে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ
হয়। তার সাথে আরো দুই জেলে ফারুক (১২), খোকন (২৫) ছিল। কেউই ফেরেনি, অনেক খোঁজা খুজি
করেছি তাদেরকে। হঠাৎ দু’দিন হলো শুনতে পেয়েছি আমার ছেলে মিলনকে নাকি পাগল অবস্থায় তালতলী
এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে । পরে ওর মা গিয়ে নিয়ে আসছে। এটা যে আমার ছেলে আমি
পুরোপুরি নিশ্চিত।
মিলনের মা মিনারা বেগম জানান, আমার ছেলেকে আমি দীর্ঘ ১৩ বছর পর আমার বুকে ফিরে পেয়েছি।
আমি অনেকদিন এই সাগর পারে পারে ছেলের খোঁজে দিন কাটিয়েছি। আজ আমার আর কোনোকিছু
চাওয়ার নেই, আমার ছেলেটা এখন মানসিক অসুস্থ। আমি এখন ওরে চিকিৎসা করাবো। ও সুস্থ হলে বলতে
পারবে এতদিন কোথায় ছিল।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির শরীফ বলেন, মিলন ২০০’৮ সালে মাছ ধরতে গিয়ে
নিখোঁজ হয়েছিল, আজকে তাঁকে তার পরিবার তালতলী থেকে বাড়িতে নিয়ে আসছে। মিলোনের বাবা,
মা, পরিবারের লোক তার গায়ে থাকা যে কাটা দাগের কথা বলতেছে তা পুরোপুরি মিলে গেছে এবং তার
সাথে কাজ করা জেলেদের মাধ্যমে আমি ওর পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি।
Leave a Reply