বগুড়া জেলা প্রতিনিধি:
শিবগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুন নাহারে বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, হয়রানি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে বাজেট, চাঁদা দাবিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষকেরা তাকে অভিযুক্ত করেছেন।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
সেই অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সাইফুন নাহার যোগদান করার পর থেকে তাঁর কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ভীতি সন্ত্রন্তের সৃষ্টি করে আসছেন। শিক্ষকরা বিভিন্নকাজে অফিসে আসলে তাদেরকে ধমক দিয়ে কথা বলেন। অত্র উপজেলায় যোগদানের পরদিন থেকেই অর্থাৎ জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের পূর্বে আমার বাড়ি মুজিবনগর, আমার পরিবারে ২/৩ জন সচিব, মামা এস পি এবং স্বামী উকিল ইত্যাদি ডায়ালগের মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করেন। এখন বলেন অত্র উপজেলার সদ্যযোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহি অফিসার আমার আত্মীয়। কেউ কিছু বললে জেল হাজতে প্রেরনের হুমকি প্রদান করেন। অপরদিকে তাঁর কলেজ পড়ুয়া ছেলে অকারণে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রীদের ছবি তোলেন। প্রতিদিন অফিস ও অফিস চত্বরে অকারণে ঘোরাফেরা করেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের চেয়ারে বসেন। শিক্ষকদের ছবি তোলেন, ভিডিও করে বিরক্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এছাড়া ফেইজ বুকে আজে বাজে ও হুমকিমূলক পোষ্ট দেন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরকে যথাসময়ে মিটিং এ যেতে না দিয়ে তাঁর অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে ২টার পর যেতে নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তিতে নির্বাচন অফিসের সহায়তায় ১২ টায় যেতে নির্দেশ প্রদান করেন।
তাঁর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে ১৩জন প্রধান শিক্ষকের ১ম উচ্চতর গ্রেড প্রদানের কাগজ পত্র অগ্রগামী করার জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের নিকট ২০০০/- টাকা অপকৌশলের মাধ্যমে উত্তোলন করেন।
অত্র উপজেলাধীন ছাতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ জহুরুল ইসলাম কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুজনিত কারণে চুড়ান্ত জি পি এফ এর টাকা উত্তোলনের জন্য প্রথমে তাঁর স্ত্রীকে ১৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার হিসাব শুনিয়ে কাগজ পত্র প্রস্তুত করার এক পর্যায়ে মরহুমের স্ত্রীকে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মনোনীত অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক জনাব সোহরাব তাকে বলেন যে তোমাকে ১৫ লক্ষ টাকা চেষ্টা করে দেওয়া হবে। ৪৮ হাজার টাকা আমাকে প্রদান করলে তোমার যাবতীয় পাওনা টাকা উত্তোলনের সার্বিক সহযোগিতা দিবে।
উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাব-স্কাউট প্রোগাম করার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ১৫০০ টাকা, বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য ২০০টাকা, শিক্ষা পদক-২০২৫ এর জন্য ১৫০টাকা চাঁদা আদায়ে প্রধান শিক্ষকদের বাধ্য করেন। প্রায় ৮/১০ বছর পূর্বে অত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে কোনো পিয়ন না থাকাইয় তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের প্রচেষ্টায় একজন কাজের আয়া নিয়োগ দেওয়া হয় যার বেতন-ভাতাদি প্রতিটি বিদ্যালয়হতে বাৎসরিক চাঁদার মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। পরবর্তি সময়ে পিয়ন নিয়োগ হলেও মানবিক কারণে তাকে আমরা কাজে বহাল রাখি কিন্তু বর্তমান উপজেলা শিক্ষা অফিসার আয়া সুফিয়া বেগমকে সকাল ও সন্ধ্যায় তার নিজের বাসায় ব্যক্তিগত কাজ করতে বাধ্য করায় যা অত্যন্ত অমানবিক এ বিষয়ে কাজের বেটি সিনিয়র শিক্ষকদের অবহিত করলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয় এবং তাঁর কলেজ পড়ুয়া ছেলে আয়াকে বিভিন্নভাবে মানসিক টর্চার করেন।
শিক্ষকদের দাবি, সাইফুন নাহার অফিস করেন নিজের ইচ্ছেমতো। বৃহস্পতিবার ও রবিবার তিনি অফিস করেন না। শুধু তাই নয় অনন্য দিনেও দুপুরে অফিস ফেরেন। শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন, তার অনুগতরা বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন।
এ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, তিনি শিক্ষকদের বদলি, বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেইনেন্স,সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাত থেকে শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুন নাহার বলেন,আমার বিষয়ে কোন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন কি, যদি পেয়ে থাকেন আমাকে জানাবেন।
সাইফুন নাহারের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, বদলি নিয়ে অনিয়ম, বিদ্যালয়ের বরাদ্দ অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দ্রুত তদন্ত এবং তার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকরা দাবি জানিয়েছেন, দুর্নীতিবাজ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুন নাহার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষাব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে। তার বদলির জন্য উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে জোর দাবি উঠেছে।
Leave a Reply