গুরুদাসপুর লিচুর দাম ভালো পেয়ে সন্তুষ্ট লিচু চাষীরা
সাজিদুল করিম,নাটোর জেলা প্রতিনিধিঃ
নাটোরের গুরুাসপুরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে শত শত লিচু গাছ। বাগানে বাগানে রসালো আর মনকারা রংঙের লোভনিয় মধুফল লিচু ঝুলছে গাছে গাছে। লিচুর ভরে ডাল নুয়ে পড়েছে মাটিতে। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর,মাহমুদপুর, মোল্লাবাজার, হামলাইকোল সহ বিভিন্ন গ্রামে।
উপজেলা কৃষিবিভাগের তথ্যমতে উপজেলায় এবার ৪১০ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠা ৫০০টি বাগানে লিচুর আবাদ হয়েছে।এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৯০ মেট্রিক টন নির্ধারন করা হয়েছে।
নাটোর জেলার লিচু খ্যাত উপজেলা গুরুদাসপুর। জেলার প্রায় চারভাগের তিনভাগ লিচু এই উপজেলাতে উৎপাদন হয়। কিন্তু এবছর প্রচন্ড খরতাপে লিচুর ফলন কম হওয়ায় বিপর্যস্ত এখানকার চাষীরা। তবে ফলনে কম হলেও বাজারে লিচুর চাহিদা থাকায় ভাল দাম পাওয়ায় সন্তুষ্ট চাষীরা। বাজারে চাহিদার সাথে ভাল দামে বিক্রি হওয়ায় ইতিমধ্যে বাগান থেকে লিচু উত্তোলন শুরু করেছেন চাষীরা।
গুরুদাসপুরের এই লিচুর বাগানকে কেন্দ্র করে ২০০১ সাল থেকে এ অঞ্চলের কানু মোল্লার বটতলায় গড়ে উঠেছে লিচু হাট। চাষীদের নিকট হতে এই ফল ক্রয় করতে হাটে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল লিচুর আড়ৎ।
এই আড়তগুলোতে ফল ক্রয় করতে ঢাকা,সিলেট,চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসেন মহাজন,বেপারীগণ ও ফড়িয়াগণ। তাই প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক লিচু চলে যায় দেশের অন্যান্য জেলা শহরে।
লিচুর বাগান মালিকরা জানান,এবছর লিচুর গুটি ভাল আসলেও প্রচন্ড খরতাপে বেশির ভাগ গুটি নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও গাছে যেপরিমান লিচু ছিল সেটা উত্তোলনের আগমুহূতে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় গাছেই ফেটে যাওয়ায় গাছে লিচুর পরিমানে কম হয়েছে। তবে বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় সন্তুষ্ট।
কেউ কেউ জানান,চার বছরের জন্য বাগান লিজ নিয়ে গত বছর ঝড় বৃষ্টি ও করোনার কারণে এখনও বাগান লিজের টাকা পুরোপুরি উঠে নাই। এবছরও প্রচন্ড খরতাপে লিচুর ফলন কম হয়েছে। তবে লিচুর ভাল বাজার থাকার কারণে লিজের টাকা উঠেও লাভ আশাব্যক্ত করেন।
বাগানে কাজ করা শ্রমিকরা জানান,আমরা প্রতিবছরই লিচু বাগানে শ্রমিকের কাজ করি। আগে কাজ করে কম টাকা পেতাম। কাজ করা টাকা দিয়ে সংসার ভালভাবে চলত না। বর্তমানে বাগান মালিকগণ আমাদের দিনমজুরি ৫শত টাকা দেন। তাতে আমাদের সংসার ভালই চলে।
আড়তের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানান,গতবছর করোনা ও ঝড়ের কারণে লিচু আমদানী কম হওয়ায় আড়তদারদের লোভসান হয়েছে। এবার লিচু ভাল হওয়ায় চাষীরা লিচু বিক্রি করে যেমন ভাল দাম পাচ্ছেন। তেমনি আড়তদারদের গত বছরের লোকসান পুসিয়ে লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.হারুনর রশিদ জানান, প্রাকৃতিক খরতাপে কিছু সমস্যা হলেও এবছর লিচু ফলন ভাল হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৯০ মেট্রিক টন নির্ধারন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চাষীরা লিচু বাজারজাতকরণ শুরু করেছেন। আমরা আশা করছি চাষীরা মৌসুমি এই ফল বিক্রি করে লাভবান হবেন।
তিনি আরো জানান লিচুর ক্রয়বিক্রয় ও ভোগান্তি কমাতে ২০ বছর পর জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ এএপি নির্দেশে এবং গুরুদাসপুর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মোঃ রাসেল এর সহযোগীতায় লিচুর হাট ইজারা দিতে সক্ষম হয়েছে।
Leave a Reply