প্রবাসীরা হচ্ছেন বাংলাদেশের বিশেষ দূত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধি:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রবাসীরা হচ্ছেন বাংলাদেশের বিশেষ দূত। সে চেতনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যথেষ্ঠ উদার এবং আমরাও সাধ্যমত সচেষ্ট রয়েছি যে কোন সমস্যার সমাধানে। সেবা পেতে কোনো অসুবিধা হলেই তারা যেন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। সাথে সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ করা হবে না।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে মার্কিন কংগ্রেস, নিউইয়র্ক এবং নিউ হ্যামশায়ার স্টেট পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ, নিউজার্সি, জর্জিয়া এবং লুইজিয়ানা স্টেটের রেজ্যুলেশন ও প্রক্লেমেশনের কপি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর উপলক্ষে বুধবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেলের অফিসে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রবাসের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মূলধারার রাজনীতিকদের অভিবাদন ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানানপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আবদুল মোমেন।
বিনিয়োগে বাংলাদেশে চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে এবং প্রবাসীদেরকে আরো দ্বিগুণ উৎসাহে স্বদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি। বাংলাদেশে যা তৈরী করবেন তারই বাজার রয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োজিত অর্থে আপনি লাভবান হবেন একইসাথে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। বহু বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে আপনি বিশেষ একটি ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন। দেশে একশতটি ইকনোমিক জোন তৈরী করা হচ্ছে। সে সব জোনে প্রবাসীরাও কল-কারখানা করতে পারবেন।
২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। আপনারা জেনে খুশী হবেন, ডিজিটাল সেক্টরে আমরা অভাবনীয় সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি। আপনাদেরই একজন, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে বাংলাদেশের হাইটেক সেক্টর অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। এখন আমরা হাই টেকে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছি। প্রায় ৬ লাখ ফ্রিল্যান্স এক্সপার্টিজ আছে হাই টেকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী ভারত,পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভুটান, মিয়ানমার, নেপালের তুলনায় বাংলাদেশের বিদেশী বিনিয়োগের মাত্রা অনেক বেশী এবং উৎপাদিত পণ্য রফতানীর ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছি। ড. মোমেন দুঃখ করে বলেন, এখনও গুগল ঘাটলে বাংলাদেশের দারিদ্রপীড়িত মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। এটির কোন বাস্তবতা নেই এখন। মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকের ভাগ্য উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকারের আন্তরিকতায় কোন কমতি নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ১০টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর ৭টি হচ্ছে বাংলাদেশে। এসব কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সেভাবে আসছে না। প্রবাসের সকলকে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ড. মোমেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদারকল্পে ঘনঘন সভা-সেমিনারের অনুরোধ জানান প্রবাসীদের প্রতি।
ড. মোমেন জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, নিউজার্সির কাউন্সিলম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন্নবী, নিউ অর্লিন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোস্তফা সারোয়ারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রক্লেমেশন ও রেজ্যুলেশন সমূহের জন্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করায়।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসার সার্বিক সহায়তায় করোনাকালেই বিভিন্ন স্টেট ও কংগ্রেসে এসব প্রক্লেমেশন/রেজ্যুলেশনের জন্যে কাজ করেছে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ কয়েকটি সংস্থা। এগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এসব হস্তান্তরকালে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মনসুর এবং সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের প্রেসিডেন্ট এম এ সালাম এবং সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন ডাইরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার। এ সময় কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রবাসের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের নানা উদ্যোগে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ‘প্রবাস-বান্ধব’ ও ‘জন-বান্ধব’ শেখ হাসিনা সরকারের প্রদত্ত একটি অঙ্গিকারের পরিপূরক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছি, যার নির্দেশ সবসময় পাচ্ছি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে। ’
পারিবারিক আমেজ এবং হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে সংক্ষিপ্ত এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মীনি সেলিনা মোমেন, আই-গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্স্যুলেট অফিসে প্রবেশের সময় বিভিন্নসেবা নিতে আসা প্রবাসীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেই কার্যক্রম অব্যাহত রেখেই ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার এ পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের রোহিঙ্গা এবং এলডিসি সম্পর্কিত শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৮ জুন তার বোস্টনে যাবার কথা। সেখান থেকে ২০ জুন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন ড. মোমেন।
এদিকে, এ অনুষ্ঠানের আগে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক পরিদর্শনকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনবান্ধব কনস্যুলার সেবা সমুন্নত রাখার উপদেশ দিয়েছেন। পরিদর্শন কালে বিভিন্ন প্রকার কনস্যুলার সেবার মান প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সেখানে ছিলেন।
কনস্যুলেটে আগমনের পর কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাসহ কনস্যুলেটের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরিদর্শনকালে তিনি কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। বর্তমান সরকারের প্রবাসী বান্ধব কূটনীতির অংশ হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে তিনি কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের পরামর্শ প্রদান করেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী কনস্যুলার সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। কনস্যুলেট নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেবা প্রদান করায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। কনস্যুলেটে আগত সেবা প্রার্থীসহ কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাদের মাঝে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। উপস্থিত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির অদম্য অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কনস্যুলেট সফরকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
Leave a Reply