মির্জা সাইদুল ইসলাম (সাঈদ)
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক বিজয়ের বাণী।
টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে,ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র দিনমজুর তোতা মিয়ার মেয়ে গৃহকর্মী তানিয়া আক্তার(২০) এর গণধর্ষনে মৃত্যুর সাত মাস পর ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়ে অবশেষে, বিজ্ঞ বিচারক (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল)টাঙ্গাইল আদালতে ৮জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন মৃত তানিয়ার বাবা তোতা মিয়া। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টাঙ্গাইলের(দক্ষিণ)ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়,গণধর্ষনে মৃত তানিয়ার হতদরিদ্র পিতা সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ভাদাটি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আব্দুল কাদির(৫২)একই গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মোঃ আব্দুল লতিফ(৫০) ও টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কুতুবপুর কালিয়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর মেয়ে রোকসানা (৪৫) দের মাধ্যমে ঘটনার তিন মাস পূর্বে মেয়েকে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের পিতা হারুন অর রশীদ ও মাতা ফেরদৌসি দম্পতির মেয়ে এবং শাহরিয়ার রানার স্ত্রী বদরুন্নাহার ভূঁইয়া(৪৫)এর বনানীর বাসায় মাসিক ৬০০০। (ছয় হাজার) টাকা বেতনে গৃহকর্মীর কাজ করতে পাঠাই।
তোতা মিয়ার ভাষ্য ও এজাহারের সূত্রমতে,চলতি বছরের গত ১০জানুয়ারি তানিয়ার সাথে আমার শেষ কথা হয়। তানিয়া মোবাইল ফোনে আমাকে জানায়, সে বদরুন্নাহারের সঙ্গে তার পূর্ব পরিচিত টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে এর পূর্ব পরিচিত আরিফের মামার বাসায় বেড়াতে আসছে এবং সেখানে তারা সপ্তাহ খানেক থাকবে।
মামলার এজাহারে নিহতের বাবা যা উল্লেখ করেন:-ঘটনার দিন ১৪জানুয়ারি রাতে অভিযুক্ত বদরুন্নাহার, ধর্ষক কুতুবপুর গ্রামের আব্দুল বাছেদের ছেলে মো. আরিফ (২৪), মহানন্দপুর উত্তরপাড়া গ্রামের শামছুল হক ওরফে বটার ছেলে মো. সোহেল রানা (২৫),বারখুটিয়া গ্রামের মো.শহিদুল ইসলামের ছেলে মো.নাসির উদ্দিন(২৪),
মহানন্দপুর দক্ষিন পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম(৩২)দের ওই বাড়িতে ডেকে এনে গৃহকর্মী তানিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তানিয়াকে একা একরুমে রেখে সে (বদরুন্নাহার) অন্যত্র গিয়ে রাত্রি যাপন করেন। ওই রাতেই তানিয়ার একাকিত্বের সুযোগে অভিযুক্তরা তানিয়াকে জোর পূর্বক সারারাত পালাক্রমে ধর্ষনের পর গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
মামলায় উল্লেখিত তথ্যমতে
গণধর্ষণের শিকার গুরুতর আহত তানিয়া আক্তার (২০)কে ১৫ জানুয়ারি বদরুন্নাহার ভুইয়া প্রথমে সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তানিয়ার অবস্থা বেশি খারাপ হওয়াতে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। টাঙ্গাইল নেওয়ার পর সেখানেও দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক তানিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।এ সময় বদরুন্নাহার ভুঁইয়া তানিয়াকে নিয়ে (চালক মাসুদ রানার, ঢাকা মেট্রো-ছ ৭১-২৮৫৫)এম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়,ঢাকা নেওয়ার সময় পথিমধ্যে তানিয়ার মৃত্যু হলে বদরুন্নাহার তৎক্ষণাৎ এম্বুলেন্স পরিবর্তন করে (চালক আরিফের ঢাকা মেট্রো-চ ১৭-২৩৪৭) অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে জেলা ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা মারুয়াখালি গ্রামে তানিয়ার বাড়িতে যায়।
তানিয়ার হতদরিদ্র পিতা, বদরুন্নাহারের নিকট মেয়ের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে বদরুন্নাহার বলেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তানিয়ার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু লাশের বীভৎসতা দেখে এবং বদরুন্নাহার ভুইয়ার কথাবার্তা ও আচার-আচরণে কিছুটা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে উপস্থিত স্থানীয় জনগণ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রায়ের বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়, রায়ের বাজার পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত এস,আই, জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে এসে তানিয়ার মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করণ পূর্বক লাশ ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ পূর্বক বদরুন্নাহার ভুইয়াকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে আটক রাখার নির্দেশ দেন।
দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস পর ডাক্তারী পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেয়ে গনধর্ষনে মৃত তানিয়ার বাবা তোতা মিয়া সখিপুর থানায় মামলা করতে গেলে, থানা পুলিশ তাকে মামলাটি আদালতে করার পরামর্শ দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তোতা মিয়া। অবশেষে মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় গত ৩১/০৮/২০২১ তারিখ টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ বিচারক (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল)’র আদালতে নিহত তানিয়ার বাবা তোতা মিয়া বাদী হয়ে ৮জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন, নারী ও শিশু মামলা নং ৩৫২/২০২১ ধারাঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)এর ৯(৩)/৩০, সঙ্গে ২০১ পেনাল কোড। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশ (দক্ষিন)কে তদন্তের আদেশ দেন।
উল্লেখ্য,গণধর্ষণের কারণে নিহত তানিয়ার শোকাহত দরিদ্র পিতা তোতা মিয়া, পৈশাচিক এই লোমহর্ষক গণধর্ষন ও পরিকল্পিত হত্যার ন্যায় বিচার পেতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখিত মামলার বিষয় নিয়ে কথা হয় টাঙ্গাইল (ডিবি দক্ষিণ) ওসি. মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে, তিনি বলেন মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে ।
Leave a Reply