গুইমারায় জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী চাইন্দামুনি বৌদ্ধ মেলা
এ এম ফাহাদ, খাগড়াছড়ি :
ফাল্গুনী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় উৎসব। প্রতি বছর ফাল্গুনী পূর্ণিমার এই দিনে শুরু হয়, পার্বত্য খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চাইন্দামুনি বৌদ্ধমেলার এই কার্যক্রম। প্রায় ২শত বছরের পুরনো পার্বত্যাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় প্রতি বছর অর্ধলক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। চাইন্দামুনি বৌদ্ধ বিহারকে উপলক্ষ করে বিহারের চারপাশের জমিতে চলে এ মেলা।নানা গোত্রের, নানা ধর্মের মানুষের আবাসভূমি হচ্ছে খাগড়াছড়িতে। এ কারনে এক অপূর্ব মেলবন্ধন ও সম্প্রীতির সংস্কৃতিতে পরিনত মেলাটি।
বুদ্ধের স্মরণে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমায় এই উৎসব পালিত হয় গুইমারা চাইন্দামুনি বিহারে। এর অপর নাম ‘জ্ঞাতিমিলন পূর্ণিমা’ বা ‘জ্ঞাতি সম্মেলন তিথি’।
বুদ্ধ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বুদ্ধপূজা,
মূলত বৌদ্ধধর্ম শীল সমাধি প্রজ্ঞা নির্ভরশীল ধর্ম। বৌদ্ধ মতে তাই জীবনের সব ক্ষেত্রে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা অপরিহার্য।
কল্পতরু গাছের চারিদিকে তরুন তরুনীদের নৃত্য পরিবেশন করে টাকা দান ফাল্গুনী পূর্নিমার ছান্দামুনি বৌদ্ধ মেলায় সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়ে।
তারা মনে করেন ‘কল্পতরু’ বৃক্ষের থেকে চাইলে পূর্ণ হয় মানুষের সব ইচ্ছে!তারা এই গাছকে বিশেষভাবে মর্যাদা দিয়ে থাকেন। কিন্তু কেনো? তারা মনে করেন ‘কল্পতরু’ বৃক্ষের থেকে চাইলে পূর্ণ হয় মানুষের সব ইচ্ছে! পারিজাত একটি ‘কল্পতরু’, এই গাছের কাছে যা প্রার্থনা করা যায়, তাই নাকি পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে যে, বেশিরভাগ পারিজাত স্বর্গে থাকলেও মর্ত্যভূমে একটি মাত্র গাছ নাকি রয়েই গেছে।
রবিবার সকাল ৯টায় বৌদ্ধ পূজার মাধ্যমে এ মেলার কার্যক্রম শুরু করেন বিহার অধ্যক্ষ রাজেন্দ্র মহাথেরো। এর পরে তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন বিহার থেকে আগত ভান্তে ও বিহার অধ্যক্ষদের উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জলন, প্রবজ্যা গ্রহণ, কল্প তরুতে টাকা দান, সংঘ দান ও,পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, ছইং দান এবং ধর্মীয় দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া বুদ্ধপূজা,হাজার বাতি প্রজ্বালন ভিক্ষু সংঘকে দান, শীলাদি গ্রহণ, ধর্মালোচনা ও বিকেলে প্রদীপ পূজা করাসহ নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতিবছরই বেশ জমে উঠে এ মেলার কার্যক্রম।
ধর্ম দেশনা নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত উপাসক-উপাসিকারা ভান্তেদের জন্য স্বযত্নে ভক্তি আর শ্রদ্ধার সহিত ছইং আনতে দেখা গেছে। তবে পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে এবার ৩দিনের পরিবর্তে মেলা চলছে একদিন।
দিনব্যাপী এই মেলায় তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী দর্শণার্থীদের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ পরিনত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায়। সকলের জন্য ছিলো নিরামিষ ভোজনের ব্যবস্থাও।
মেলায় পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পন্য সামগ্রী ও দেশি নানান রকম পন্যের শত শত স্টল বসেছে। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা, ভাগ্য লটারি ও উপজাতীয় কল্প তরু নৃত্যের আয়োজন ছিলো। মেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তরুণ তরুনীদের সাথে একাকার হয়ে মনের হরসে কেনাকাটা করছে বাঙ্গালী তরুণ-তরুনীরা।
উদ্বোধনকালে বিহার ও মেলা পরিচালনা কমিটির পক্ষে চাইশ্যে মারমা বলেন, মূলত ফাল্গুনী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় উৎসব। বুদ্ধের স্মরণে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমায় এই উৎসব পালিত হয়। এর অপর নাম “জ্ঞাতিমিলন পূর্ণিমা বা জ্ঞাতি সম্মেলন তিথি”। এই পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। এজন্য এই দিনে চাইন্দামুনি বৌদ্ধ মেলাসহ বৌদ্ধ অধ্যুষিত অনেক স্থানে এ মেলা বসে।
Leave a Reply